অন্যরকম
শিশুর কান্নায় সাড়া দেয় কুমির!
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
আবেগ যে কেবল মানুষের আছে তা নয়। বিভিন্ন প্রাণীও কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করে। তবে এক প্রাণী কি অন্য প্রাণীর কণ্ঠ শুনে পরিস্থিতি বুঝতে পারে? এক গোত্রের প্রাণীর আবেগ-অনুভূতি কি অন্য গোত্রের প্রাণী বুঝতে সক্ষম? এটি গবেষণার বিষয় বটে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ সম্পর্কিত চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি. বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায়, নীল নদের কুমির মানুষ ও বনমানুষের শিশুর কান্নার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বুঝতে একটি পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানব শিশুর কান্নার শব্দে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় কুমির। শুনতে রূপকথা মনে হলেও আসলেই এমনটা হচ্ছে। কুমির মানুষের ও বানরের বাচ্চার কান্নার শব্দে আকৃষ্ট হয় বলছে গবেষণা। ফ্রান্সের সিএনআরএস’র গবেষকরা বলেছেন, কুমির এবং প্রাইমেটের (শ্রেষ্ঠ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী) মধ্যে দূরবর্তী বিবর্তনীয় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, নীল নদের কুমিরগুলো বনমানুষ ও মানুষের বাচ্চার কষ্টের মাত্রা পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এই শনাক্তকরণ বা অনুভূতি বোঝার ক্ষেত্রে তারা মানুষের চেয়েও বেশি গভীরতায় স্তন্যপায়ী শিশুদের আবেগ বুঝতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, সম্ভাব্য শিকারের যন্ত্রণা পরিমাপ করার জন্য এটি কুমিরের একটি সহজাত ক্ষমতা হতে পারে।
গবেষণায় প্রয়োজনে গবেষকদল একটি গবেষণা ডাটাবেস থেকে শিশুর কান্নার শব্দ সংগ্রহ করেছেন। এসব শব্দে ভিন্ন ভিন্ন স্তরের কষ্ট প্রকাশিত হয়। শিশুগুলো মূলত তাদের মাকে ডাকার জন্য কিংবা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কেঁদেছিল। বিজ্ঞানীরা কান্নার মধ্যে ১৮টি ভিন্ন ভেরিয়েবল শনাক্ত করেন। এর মধ্যে রয়েছে তাদের পিচ, সিলেবল সংখ্যা, সময়কাল, বিশৃঙ্খল এবং সুরেলা শব্দ ইত্যাদি। গবেষক দল, এই সমীক্ষার জন্য মরোক্কোর ক্রোকো পার্কে গিয়ে অসংখ্য পুকুরে থাকা প্রায় ৩০টি কুমিরকে বেছে নেন।
শিশুদের কান্নার প্লেব্যাকগুলো চালানো হলে কুমিরগুলোর মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, কুমিরগুলো প্লেব্যাকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় এবং শিশুর কান্নার শব্দের মানে বোঝার জন্য তারা মুখে বিভিন্ন শব্দ করে। যেসব কান্নার শব্দে দুঃখের মাত্রা বেশি সেগুলোর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে এই সরীসৃপেরা। কুমিরদের এ প্রতিক্রিয়া শিকারি প্রাণীর স্বাভাবিক আচরণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তারা বলেছেন, স্ত্রী কুমিরদের মাতৃত্বের সহজাত প্রবৃত্তিও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার ভালো সম্ভাবনা আছে।