নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে একদফা দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশের মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা ও নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করেছে দলটি। সবশেষ ঢাকায় গণমিছিল করেছে দলটি। রাজপথের এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে জীবনবাজি রেখে ও মামলা-হামলা উপেক্ষা করে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক কেন্দ্রীয় নেতাদের আন্দোলন-সংগ্রামে তেমন দেখা যায় না। তারা নিজেদের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে আড়াল করে রাখেন।
সম্প্রতি ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চাইলে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হলেও প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পিছু হঠতে হয় বিএনপিকে। ওই দিনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৫০০’র বেশি নেতা থাকলেও অধিকাংশের রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না, যার ফলে বারবার আন্দোলনে ব্যর্থ হতে হচ্ছে বিএনপিকে। তবে, এ বিষয়ে আর ছাড় দিতে রাজি নয় দলের হাইকমান্ড। রাজপথে না থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে হাইকমান্ড জানিয়েছে- চলমান আন্দোলনে যারা মাঠে থাকবে, আগামীতে তাদেরই দলে মূল্যায়ন করা হবে। অন্যথায় বিবেচনার কোনো সুযোগ থাকবে না। একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা সব সময় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আন্দোলনের ডাক দিলে বিএনপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ঘরে বসে থাকেন। আর কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচিতে না থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ওপর নির্যাতন চালায়, মামলা দেয়ার পাশাপাশি গণহারে গ্রেপ্তার করে। এ কারণে আন্দোলন সফল হয় না। তাই আন্দোলন করতে হলে আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে নামাতে হবে।
সূত্র মতে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের কোনো নেতা সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলে তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নেয়া হবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এরই মধ্যে ছাত্রদলের সভাপতিকে সরিয়ে দিয়ে এবং ঢাকা মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দিয়ে সবাইকে দেওয়া হয়েছে এমন সতর্কবার্তা। তাই একদফার সব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের উপস্থিতির দিকে নজর রাখবে হাইকমান্ড। প্রতিটি ইউনিট থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কেমন হয়, সেটাও পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো ইউনিট বা এলাকার উপস্থিতি কম হলে তাদের তালিকা করা হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের দিকেও কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। রাজপথের বিগত কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদীদের এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির দিন কিছু নেতার ভূমিকা হাইকমান্ডের চোখ খুলে দিয়েছে।
দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতার কর্মকাণ্ড মোটেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। এরই মধ্যে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সক্রিয়দের মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হঠাৎ, করেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীতে পৃথকভাবে গণমিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। বাড্ডার সুবাস্তু মার্কেটের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গণমিছিল শুরু করে। মিছিলের নেতৃত্বে থাকেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি কমলাপুর এলাকা থেকে গণমিছিল শুরু করে। ওই মিছিলের নেতৃত্বে থাকেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। গণমিছিলে আশানুরূপ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি হয়নি বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করছে। জানা মতে, বিএনপির সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চে। সেই কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে নেতা আছেন ৫০০’র বেশি। তাদের অধিকাংশই পদ নিয়ে বসে আছেন, অনেকেই কর্মসূচিতে অংশ নেন না।
এছাড়া সক্রিয়দের দিয়ে শূন্যপদ পূরণের কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতা ও আইনি জটিলতায় অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে রাজনীতিতে অনুপস্থিত। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও মাঠের রাজনীতিতে অনুপস্থিত। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা বার্ধক্যজনিত কারণে রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারতের কারাগারে আছেন। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বেশ কয়েক দিন ধরে দেশের বাইরে আছেন। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও বার্ধক্যজনিত কারণে রাজপথের আন্দোলনে আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলের মধ্যে কয়েকজন আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়।
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী মারা গেছেন। শওকত মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বরকত উল্লাহ বুলু, অধ্যাপক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীসহ কয়েকজন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকলেও অন্যদের রাজনীতির মাঠে তেমন সক্রিয় দেখা যায় না। বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বে) অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছেন। এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুন-অর-রশিদ আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আসলাম চৌধুরী কারাগারে আছেন। বিএনপির কমিটিতে স্থান পাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে চলমান আন্দোলনে তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালও চলমান রাজপথের আন্দোলনে তেমন সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন না।
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ছেলের বউ ও নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ রায় চৌধুরী এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। সম্পাদকম-লীর মধ্যে ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মাহবুবুর রহমান শামীম, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, আসাদুল হাবিব দুলু, ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিলকিছ জাহান শিরিন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আজিজুল বারী হেলাল, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান রতন, নুর-এ-আরা সাফা, এবিএম মোশারফ হোসেন, মীর সরাপ্ত আলী সফু, শিরিন সুলতানা ও আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীসহ বেশ কিছু নেতা রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও অধিকাংশই রাজপথের আন্দোলনে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
এছাড়া সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-দপ্তর সম্পাদক ও সহ-প্রচার সম্পাদকম-লীসহ বেশ কিছুসহ সম্পাদক এবং নির্বাহী সদস্য রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও অনেককে আন্দোলন-সংগ্রামে তেমন দেখা যায় না। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলায় পদ নেওয়ার পর অনেকেই আর কর্মসূচিতে সক্রিয় হন না। অনেকে সভা-সমাবেশে অংশ নিতে স্বাছন্দ্যবোধ করেন না। কোনো কর্মসূচি ঘিরে বিশেষ পরিস্থির সৃষ্টি হলে, তাদের আর পাওয়া যায় না।
কেন্দ্রীয় ও ঢাকায় থাকা নেতাদের জেলার দায়িত্বে না দেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার হাইকমান্ডকে বলা হলেও তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ এসব নেতাদেরই মাঠের কর্মসূচিতে ভূমিকা নিতে দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা সবাই কঠিন সময়ের সম্মুখীন। এর থেকে কঠিন সময় কখনো আসেনি। সুতরাং, দলে যারা সাহসিকতার সঙ্গে সামনে থাকবেন, তারা হবেন প্রকৃত নেতা। আগামী দিনের বিএনপির কান্ডারি। একজন যোগ্য নেতার আদর্শ, উদ্দেশ্য, সাহস এমনকি প্রয়োজনে দুঃসাহস থাকতে হবে। তার মূল পরীক্ষা হয় তখনই, যখন কঠিন সময় আসে।
সুবিধাভোগী নেতাদের এখন আর কোনো সুযোগ নেই। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, কারা সম্মুখভাগে সামনের দিনে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মোকাবিলা করছে। এদিকে, আগামীতে যে কোনো কর্মসূচিতে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র থেকেও সতর্ক নজর রাখা হবে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেই পড়তে হবে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায়। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। জানা যায়, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ‘অলআউট’ আন্দোলনে নামার যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংগঠনের কোনো স্তরে ‘গাফলতি’ দেখতে চায় না বিএনপি।
রাজপথে নেতাকর্মীদের শক্ত উপস্থিতি চায় দলটি। দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, পদণ্ডপদবি নিয়ে এখন ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে মাঠে থেকে কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে হবে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, অসুস্থতার কথা বলা হলেও দায়িত্বে অবহেলার কারণেই ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাকে দলের নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের জন্য ‘কঠোর বার্তা’ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- চলমান আন্দোলনে যারা মাঠে থাকবে, আগামীতে তাদেরই দলে মূল্যায়ন করা হবে। অন্যথায় বিবেচনার কোনো সুযোগ থাকবে না।
এদিকে, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ এক দফা দাবিতে টানা দুই দিন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে গণমিছিল করে দলটি। আর দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার সারাদেশে পদযাত্রা করবে দলটি।
সূত্র থেকে জানা যায়, এসব কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হবে। সূত্র মতে, গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নেতাদের মধ্যে চলছে পদ হারানোর আতঙ্ক। ওই দিনের কর্মসূচি ঘিরে দলের যেসব নেতা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন এবং ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সে গুঞ্জন আরো ডালপালা গজিয়েছে।
নেতাকর্মীরা মনে করছেন, অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে দলের তদন্ত টিমের করা প্রতিবেদনে অনেকেই ফেঁসে যেতে পারে। অনেকের পদণ্ডপদবিতেই টান পড়তে পারে। আবার অনেককে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা হতে পারে বলে মনে করছেন কর্মীরা। প্রসঙ্গত, বিএনপির একদফা দাবির সাথে একমত হয়ে গণমন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ ও এনডিএমসহ সমমনা রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনও নেতার তেমন ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।