চট্টগ্রামে কমছে না মশার দাপট
দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা ডেঙ্গুর প্রকোপ
* চট্টগ্রাম নগরীর লোকসংখ্যার তুলনায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না। যেখানে যে পরিমাণ ওষুধ ছিটানো দরকার তা হয় না। ফলে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে।
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মশক নিধনের কার্যক্রমে তেমন গতি নেই। পুরো নগরীজুড়ে বেড়েই চলেছে মশার দাপট। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে। গড় হিসাবে ১৫০ রোগী এখনো ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিন। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত বিরতিতে। নগরবাসী মনে করেন, মশক নিধনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এজন্য মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মশার প্রকোপ এড়াতে পুরো নগরীজুড়ে পরিকল্পিতভাবে ওষুধ ছিটানো জরুরি। অন্যথায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মশা নিধনের মূল কাজটি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বর্ষার মৌসুমে মশার দাপট বাড়ে। আর ওই সময় চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের তৎপরতাও বাড়ে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় মশা নিধন করতে। তবে নগরবাসী মনে করেন, নগরীর লোকসংখ্যার তুলনায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না। যেখানে যে পরিমাণ ওষুধ ছিটানো দরকার তা হয় না। ফলে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে।
চসিক সূত্র জানায়, গত একযুগের বেশি সময় ধরে মশা নিধনের কার্যক্রম চলছে। এ সময় এই খাতে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা ব্যয় হয় মশক নিধনেই। বর্তমান মেয়রের মেয়াদের সময় এরই মধ্যে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এর আগে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের মেয়াদকালে খরচ হয় ৩ কোটি ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা। বাকি অর্থ খরচ হয় আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৬৪২ টাকা, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮৫ টাকা, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ টাকা ব্যয় হয়। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধন খাতে কোনো ব্যয় দেখানো হয়নি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি টাকা ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই খাতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সাধারণ লোকজনের প্রশ্ন প্রতি বছর কোটি টাকার বেশি খরচের পরও মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন? অনেক এলাকার লোকজন কীটনাশক ছিটাতে দেখেন না বলেও জানান তারা। মশা নিধনে কোথাও শুবঙ্করের ফাঁকি আছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, পুরো নগরীজুড়ে বিভক্ত হয়ে পরিচছন্নতা কর্মীরা মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরিচালনা করা হয় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। তবে নগরীর পরিধি অনেক বড়। লোকসংখ্যাও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। তাই যে পরিমাণ ওষুধ ছিটানোর কথা সেই পরিমাণ হয়তো ছিটানো হয়নি।
এদিকে নগরীতে মশার হট স্পটগুলো বেড়েই চলেছে। চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রজননস্থল হিসেবে ৪৩৩টি মশার হটস্পট চিহ্নিত করে। এছাড়া ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এমন এলাকাগুলোকে ভিত্তি করে আরো ৫৭টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়।
গত মাসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের জরিপে দেখা যায়, নগরের ৩০ শতাংশ বাসায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। এছাড়া ২১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশ।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা ইমরান আলম বলেন, গেল চার মাস ধরেই মশার দাপট। চসিকের মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কথা কেবল পত্রিকায় দেখি। বাস্তবে এখনো চসিকের মশক নিধন কর্মীদের দেখা পায়নি। আমরা মনে করি মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালা হচ্ছে ঢিলেঢালাভাবে। এজন্য নগরবাসী মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জীবন যাপন করছে। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চাই।
নগরীর খতিবের হাট এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। আমার মনে হয় চসিকের দুর্বল মশক নিধন তৎপরতার কারণে মশার প্রজনন আরো বাড়ছে। এজন্য নগরবাসী চরম মূল্য দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আসলে মশক নিধনে দৃশ্যমান তৎপরতা জরুরি। সেই সঙ্গে এই কার্যক্রমকে গতিশীল করতে তদারকি দরকার।
অন্যথায় চট্টগ্রাম নগরী মশার ভাগাড়ে পরিণত হবে।