উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের পর থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে নিজেই অপারেশন শুরু করেছেন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী। চিকিৎসক সংকটের কারণে চলতি মাসের দুই দিনে পাঁচটি সিজার করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান তিনি। জানা যায়, চলতি আগস্ট মাসের ৫ তারিখে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন জেলা সিভিল সার্জন। ১৪ আগস্ট একই হাসপাতালে আরো দুটি সিজার অপারেশন করেছেন তিনি। সিজার অপারেশনগুলোতে অ্যানেসথেসিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আধুনিক সদর হাসপাতালের ডা. মনসুর আলম ও সহযোগী হিসেবে ছিলেন দেবীগঞ্জ হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মুক্তি বিশ্বাস ও ডা. তাসলিমা তানজিম। ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, যোগদানের পর পঞ্চগড়ের স্বাস্থ্যসেবা আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে এখানকার স্বাস্থ্য কমপেক্সগুলোতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক সময় অনেক হতদরিদ্র প্রসূতি মায়েরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা বাধ্য হয়েই কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আশ্রয় নিয়ে সিজার করাচ্ছেন। এতে তাদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বঞ্চিত হচ্ছেন সঠিক চিকিৎসা থেকে। বিষয়টি বিবেচনা করেই তিনি প্রতি সোমবার বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে সিজার সম্পন্ন করছেন। তিনি বলেন, গত ১৩ জুলাই তারিখে আমি পঞ্চগড় সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকে সদর আধুনিক হাসপাতালসহ উপজেলার হাসপাতালগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এসব উদ্যোগের মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্য বিভাগকে জনবান্ধব গড়ে তোলা। যেসব দরিদ্র প্রসূতি মায়েরা চিকিৎসক সংকটের কারণে সরকারি হাসপাতালে সিজার অপারেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাদেরকে আমি নিজেই সিজার অপারেশন করছি। এখন পর্যন্ত দেবীগঞ্জ হাসপাতালে পাঁচটি সিজার অপারেশন সম্পন্ন করেছি। আর হাসপাতালের ক্যাম্পাসকে পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যবর্ধিত করা ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার কমাতে এসব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি।
ডা. মোস্তফা জামান আরো বলেন, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে যেসব সমস্যা রয়েছে, স্বাস্থ্যসেবায় ভোগান্তি রোধে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। দেবীগঞ্জের পর এখন তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যাগুলো দূর করার পরিকল্পনা আছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও যাতে চিকিৎসাসেবা বাড়ানো যায়, সে বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে সহজে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে, সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। এক্ষেত্রে বলতে পারি, আমার নিজের পরিচয় ও পদবি হিসেবে নয়, একজন চিকিৎসক হিসেবে এ জেলার জনমানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাব। নতুন সিভিল সার্জনের যোগদানের পর গৃহিত উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় সচেতনমহল। তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা এমন উদ্যোগ জেলার প্রত্যেকেই উপকৃত হবেন।