কক্সবাজারে আ.লীগ নেতা সাইফুদ্দিন খুন
সিসিটিভিতে ধরা পড়া যুবককে শনাক্ত করতে তৎপর পুলিশ
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেল কক্ষে হাত বেঁধে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনকে। গত রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এবং মুখে মাস্ক দেয়া এক যুবককে সাথে নিয়ে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন। ওই যুবক রাত ৮টা ১০ মিনিটের পর ওই কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। হোটেলটির সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এই দৃশ্যের যুবককে শনাক্ত করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ছয় থেকে সাতজনকে হেফাজতে আনা হয়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে রেখে বাকিদে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, মূলত সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাওয়া, সাদা পাঞ্জাবি ও মুখে মাস্ক দেয়া যুবককে শনাক্ত করতে এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই যুবককে শনাক্ত করা সম্ভব হলে খুনের রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন। গতকাল সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিড মোড়-সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে হাত বাঁধা ও রক্তাক্ত সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুপুর আড়াইটার দিকে মরদেহটি আনা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে। নিহতের সাইফুদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের এক সময়ের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে তিনটি ছুরিকাঘাতসহ অন্যান্য জখম চিহ্ন পাওয়া গেছে। আর হাত নিহতের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে বাঁধা ছিল। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজসহ নানা উৎস থেকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, গত রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিহতসহ দুইজন এসে ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেন। গতকাল সোমবার সকালে তার সন্ধানে আসেন তার বন্ধুরা। বন্ধুদের সাথে নিয়ে কক্ষটিতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলে খুলে যায়। খাটে রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। নিহত সাইফুদ্দিন প্রায়শই হোটেলে এসে রুম নিয়ে থাকতেন। হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ এবং পার্শ্ববর্তী আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি হোটেলটিতে যান। সিসিটিভির ফুটেজ তিনিও দেখেছেন। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সন্দেহজনক কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে তিনি শুনেছেন।
অপর আরেকটি সূত্র দাবি করেছে, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া যুবক কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আশরাফুল ইসলাম। নানাভাবে বিষয়টি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের নজরে এলে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে ওই সময় তাকে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে সাইফুদ্দিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুনিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের নামাজে জানাজা রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে সাইফুদ্দিনের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিহত সাইফুদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।