চট্টগ্রামে আবার বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। ৩৫ থেকে ৪০ টাকার প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখন ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এরপর শুধু বেড়েই চলেছে। খাতুনগঞ্জে গেল শনিবার রাতেই বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এরপর আর থেমে নেই। এদিকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনে হতাশ ক্রেতারা। তারা বরাবরের মতো অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। প্রশাসন এখনই পেঁয়াজের দামে লাগাম না টানলে ক্রেতারা বিপাকে পড়বেন। এজন্য দ্রুত আড়তগুলোতে অভিযান চালানোর দাবিও জানিয়েছেন ক্রেতারা।
গত রোববার ও সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম বেশি। অনেকটা হঠাৎ করেই দামে বেড়েছে ঝাঁজ। আড়তগুলোতে ভারতের পেঁয়াজই বেশি। ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হতে থাকে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৩৩ থেকে ৪০ টাকা। আর মহারাষ্ট্রের নাসিকের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৪১ থেকে ৪৩ টাকা। সে হিসেবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দাম আরো বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত গত বছর এ সময়ে যে মানের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, তা এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সে হিসেবে বেড়েছে ৪৪ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। গত সোমবার এই মানের পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৬ টাকা, যা বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। তাছাড়া বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। হঠাৎ পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকাররা দুষছেন আড়তদারদের। আর আড়তদাররা ভারতের নতুন শুল্কহার যুক্ত হওয়াকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে যুক্তি দেখাচ্ছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ী আদিল মাহবুব বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমদানিতে দাম বেশি পড়লে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আড়তদাররা যে দর দেন, সেই দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তদাররা আমাদের বলেছেন আড়তে যে পেঁয়াজ এসেছে তাতে ভারতের নতুন শুল্কহার যুক্ত হয়েছে, যার ফলে দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, এখন ভারত থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। কম দামে বিক্রি করার কোনো উপায় নেই। আমদানিতে দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করব পেঁয়াজ।
আরেক আমদানিকারক বলেন, শুল্কহার বাড়ানোর খবর প্রকাশের পর পরই পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এটা আসলে বহু দিনের একটি পুরোনো রীতি। শুল্ক হারের পাশাপাশি পেঁয়াজের আমদানি খরচ, বুকিং রেট বেড়েছে। তার মধ্যে পেঁয়াজ পচনশীল হওয়াতেই প্রতি মণে ৭ থেকে ৮ কেজি পচে যায়। সবমিলিয়ে গত গেল শনিবার রাতে যে পেঁয়াজ আড়তে এসেছে, তা গত সপ্তাহের বুকিং দেওয়া, যা টনপ্রতি কেনা পড়েছে মানভেদে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। তার মধ্যে পরিবহণ খরচ আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, কয়েক বছর ধরে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন ৩৫ লাখ টনের বেশি। আর চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন। উৎপাদন বেশি হলেও আমদানি করতে হয়, কারণ ২৫ শতাংশ বা তারও বেশি উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা জটিলতায় নষ্ট হয়ে যায় বলে জানা যায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছর (জুন-জুলাই) থেকে এই দুই মাসে আমদানিকারকরা ১২ লাখ ৩৪ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে।
যেখান থেকে আমদানি হয়েছে ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশের বেশি। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারিভাবে। এতে গেল ১৬ মার্চ থেকে দেশের সবগুলো স্থল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দেশি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গেল ৪ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ৫ জুন থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এতে এক মাস পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী ছিল। এখন আবার পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলো।