থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ১৫ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে নিজ দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। একটি প্রাইভেট জেটে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এই থাই বিলিয়নিয়ার। এই সময় শত শত সমর্থক ব্যানার নেড়ে এবং গান গেয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায়। দেশটিতে চলমান জটিল রাজনৈতিক সমিকরণের কারণে প্রাক্তন ম্যানচেস্টার সিটির মালিক এবং বিতর্কিত এই থাই রাজনীতিককে দেশের মাটিতে নেমেই পুরোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হয়।
ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও রাজতন্ত্রের প্রতি অনানুগত্যের অভিযোগে ২০০৮ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুবছর পর সামরিক বাহিনী তাকে জেলে নিতে চাইলে তিনি দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান। খবর সিএনএ, বিবিসি।
গতকাল নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পার্লামেন্টে ভোটাভোটি হওয়ার প্রাক্কালে থাকসিন দেশে ফিরলেন। থাকসিনের বিরুদ্ধে মোট ১০ বছর কারাদণ্ডের সাজা রয়েছে। তাকে কতদিন কারাগারে থাকতে হতে পারে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তার সহযোগীরা আশা করেছেন, সংক্ষিপ্ত কারাবাসের পর তাকে গৃহবন্দি করা হতে পারে। এর আগে থাইল্যান্ডের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা টিকটকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, থাকসিন লাল রঙের টাই ও ডার্ক স্যুট পড়ে হেঁটে একটি ছোট প্লেনের দিকে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সফল এ নেতাকে ভয় পায় দেশটির রক্ষণশীল রাজ পরিবারের সদস্যরা। থাকসিনকে দুর্বল করতে সামরিক অভ্যুত্থান ও একাধিক বিতর্কিত মামলা দায়ের করার পেছনে সমর্থন ছিল রাজ পরিবারের। বলা হচ্ছে, থাকসিনের এ প্রত্যাবর্তন সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। থাইল্যান্ডের সাবেক টেলিকমিউনিকেশন টাইকুন থাকসিন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন। বলা হয়, থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে ২০০৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৭৪ বছর বয়সি এ বিলিয়নেয়ারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে থাকসিন ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দণ্ডিত হন ও কারাগারে যাওয়া এড়াতে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের নির্বাসিত জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃহত্তম শহর দুবাইতে কাটিয়েছেন।
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন : প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন দেশটির রিয়েল এস্টেট মোঘলখ্যাত স্রেথা থাভিসিন। গতকাল দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার সমর্থন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে নতুন জোট সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত এবং প্রায় তিন মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। স্রেথা এমন একদিনে থাইল্যান্ডের সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন, যেদিন ১৫ বছরের নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেই কারাবন্দী হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা।
স্রেথা থাভিসিনের রাজনৈতিক দল ফেউ থাই পার্টি গত মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। কিন্তু তারপরও থাইল্যান্ডের সংসদের উভয়কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দেশটির ৩০তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
গতকাল দেশটির সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভোটের গণনা অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্য এবং সর্বশেষ থাই জান্তার নিয়োগকৃত উচ্চকক্ষ সিনেটরদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৭৪ ভোটের সীমা পেরিয়ে যান স্রেথা।
প্রায় এক ডজন দলকে নিয়ে ফেউ থাইয়ের গড়া জোট সংসদের নিম্নকক্ষের ৫০০ আসনের মধ্যে ৩১৪টি দখল করেছে। তবে সাবেক বিরোধী শক্তি ও শত্রুদের জোটে নেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ফেউ থাই পার্টি। এমনকি এই জোটের মধ্যে ফেউ থাইয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দলও রয়েছে। গত মাসে সংসদে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ভোটাভুটিতে সেনাপন্থি আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল সিনেটরদের যথেষ্ট সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন এমএফপির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত। পরে দেশটির সাংবিধানিক আদালত তাকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করে।
সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি