রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সেবার মানের সাথে বাড়ছে রোগী

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কফিল উদ্দিন, রামু (কক্সবাজার)

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (চা-বাগান হাসপাতাল) দৃশ্যপট। অবকাঠামোগত উন্নয়নে যেমন এগিয়ে তেমনি নিরাপত্তা ও আধুনিকতায় এগিয়ে রয়েছে। একটি সময় ছিল কক্সবাজারের রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার কোনো পর্যাপ্ত জিনিসপত্র বা জনবল ছিল না, দুর্ভোগে পড়তে হতো সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের। এই সেই কথাটি ভুলতে বসেছে রামু সাধারণ মানুষ। সেবার মানের সাথে এই হাসপাতালে নিয়মিত বাড়ছে রোগী। দৈনিক সেবাপ্রার্থী হাজার ছাড়িয়েছে।

বর্তমানে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩০ শয্যার হাসপাতাল হলেও দৈনিক ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০-এর কাছাকাছি। গতকাল আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩২ জন এবং বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন ৬৯০ জন রোগী। ৩০ শয্যার রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মানোন্নয়ন ও চিকিৎসাসেবা আরো বৃদ্ধির জন্য ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে এই হাসপাতালে সিজার বন্ধ হয়। সম্প্রতি চালু রয়েছে ডেলিভারি কার্যক্রম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস হতে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সমীকরণে দেখা যায় ৯০টিরও বেশি সিজার সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে অন্যদিকে নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে ১০০টিরও বেশি রোগীকে।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (চা বাগান হাসপাতাল) জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যবর্ধন সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে রামুর স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে এক অনন্য সুন্দর সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা সমাজকর্মী রহিম উদ্দিন সোহেল।

বিনামূল্যে সিজার অপারেশন করা রোগী মনিরা খাতুন (২০) এর স্বজনরা জানান, বিনামূল্যে সিজার অপারেশন করতে পারায় আমরা খুব খুশি। কারণ আমাদের পক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করা সম্ভব হতো না।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, আগে জানতেন সরকারি হাসপাতালে সেবা নেই। এখানে এসে দেখেন তার উল্টো। আনসার আলী নামের একজন জানান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালো সেবা পেলে মানুষ কখনো প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে না।

মরিয়ম খাতুন নামের একজন জানান, কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আগের সময়ের চেয়ে রোগীরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই হাসপাতালে চারজন মেডিকেল কনসালটেন্ট, তিনজন মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার একজন, ১৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী এবং ১৫ জন নার্স নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের আটটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আটজন ডাক্তার নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, অন্যদিকে রামু উপজেলার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামে ২৮টি গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালনায়।

রুমেল বড়ুয়া নামের এক স্বাস্থ্য সহকারী জানান, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই পরিবর্তনের মূল কারিগর ইউএইচএফপিও ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া স্যার। স্যারের যোগদানের পর থেকে প্রত্যক দিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী বহির্বিভাগে এবং একশ’র বেশি রোগী জরুরি বিভাগে সেবা পায়। বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা সকাল-বিকাল দুই শিপ্টে চালু আছে। গাইনি বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, এনসি ডি, স্যামসহ ফিভার কর্নার, আইএমসিআই, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমসহ অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ফিল্ড লেবেলে ও কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে রামু স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

জানতে চাইলে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, রামু উপজেলার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এখন শুধু রামু উপজেলা নয়, পার্শ্ববর্তী উপজেলা হতেও রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। বৃদ্ধি পেয়েছে জনবল; বৃদ্ধি পেয়েছে সেবার পরিধি। সামনে আরো বেগবান হবে স্বাস্থ্যসেবা। সবার দোয়া ও ভালোবাসা আমার এই চলার পথে পাথেয়। যতদিন আছি সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার যোগ্য দেশ পরিচালনায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ।

এছাড়া রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (চা-বাগান হাসপাতাল) নিয়মিত চিকিৎসা সেবার পাশপাশি অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বল্প মূল্যে নিয়মিত আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, এক্সরে, ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। নিয়মিত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সি সব মহিলাকে বিনামূল্যে ভায়া টেস্ট (জরায়ুর ক্যান্সার) পরীক্ষা করানো হয়। অন্যদিকে এই হাসপাতালটিতে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র (ব্লাড-ব্যাংক)। স্বল্প খরচে রোগীদের রক্ত আদান-প্রদান করা হচ্ছে নিয়মিত।