‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন 

কয়েক মাস পরেই হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই আগেভাগে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’র পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার কৌশল নিয়েছে সংগঠনটি। সে উপলক্ষ্যে আসছে পহেলা সেপ্টেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ৫ লাখ তরুণ ও ছাত্রের সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ‘ছাত্র সমাবেশ’ এর আয়োজন করতে যাচ্ছে সংগঠনটি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীদের নির্বাচনি দিকনির্দেশনা দিবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজম্মের আস্থা রয়েছে এমন বার্তাই দিতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। দেশবাসীকে আগামী নির্বাচনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকার আহ্বান জানাবে তারা। সেখানে তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ছাত্রসমাজের করণীয় ও দেশবাসীর কাছে ভোট চাইবেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসী ও ছাত্রসমাজকে সর্তক থাকারও আহ্বান জানাবেন শেখ হাসিনা।

ছাত্রসমাবেশ সফল করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জোর কদমে চালাচ্ছে প্রচারণা। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ১২৫ ইউনিটের নেতাকর্মীরাও ব্যস্ত। সমাবেশে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির লক্ষ্য পূরণে নেওয়া হচ্ছে নানা কৌশল। ইতিমধ্যে বিশেষ বর্ধিত সভা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটাতে ইউনিটগুলোকে টার্গেট দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জনসংযোগ চালাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দেশজুড়ে পোস্টার ও মাইকিং করছে। কেন্দ্র থেকে দেশের সবকটি জেলা- উপজেলায় ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ পোস্টার পাঠানো হয়েছে। উপস্থিতির উপরে রাখা হয়েছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। ছাত্রসমাবেশে যে ইউনিট সর্বোচ্চ উপস্থিতি দেখাতে পারবে তাদের পুরস্কৃত করবে ছাত্রলীগ। উপস্থিতি হতাশাজনক হলে নেওয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও। নেতাকর্মীদের ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রসমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের একাধিক নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রলীগ। নির্দেশনায় রয়েছে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা, মেডিকেল কলেজ, কলেজ, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন শাখা নিজ উদ্যোগে (কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে) নিজ-নিজ ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, ছাত্র-তরুণ-যুবকদের নিয়ে উপস্থিত হওয়া। প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিট ছাত্রসমাবেশ সফল করতে নিজ ইউনিটে ও তার অধীনস্ত ইউনিটগুলোতে নির্বাহী সভা, বর্ধিত সভা, কর্মিসভার আয়োজন করা। নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলা, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জনদুর্ভোগ পরিহার করা। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রসমাবেশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় থাকবে সমাবেশের আশপাশের এলাকা। কেউ যদি কোনো বিশৃঙ্খলা করে, তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্বে থাকবেন। বিশাল এ জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। আর তাই মহাসমাবেশে যেন কোনো ধরনের নাশকতা না ঘটে, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানা গেছে। ছাত্রসমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ছাত্রসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছাস উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ছাত্রসমাজের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে, সমাবেশে তার বহিঃপ্রকাশ ঘাটবে। বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্ম শপথগ্রহণ করবে, আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লব নিশ্চিত করার। সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আগাচ্ছি। সমাবেশ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন শেখ বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্ব সারা দেশে ছাত্র ও তরুণদের মাঝে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রসমাবেশ মহাসমাবেশ পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ। ছাত্রসমাবেশের মাধ্যমে যে বার্তাটি আমরা দেশবাসীকে দিতে চাই- তা হলো, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এবং তরুণ প্রজন্মের রায় শেখ হাসিনার পক্ষে আছে। গাজীপুর থেকে ২০ হাজার ছাত্র নিয়ে সমাবেশ উপস্থিত হবেন গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ। জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে সমাবেশ উপস্থিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গাজীপুর জেলার সর্বত্র মাইকিং করা হচ্ছে, পোস্টার লাগানো হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উপরে ছাত্রসমাজের আস্থা রয়েছে, আমরা সেই বার্তাই দিতে চাই। আইন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ ইকবাল রিপন বলেন, গণতন্ত্র, সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংসকারী চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ। দেশবাসীকে আমরা সেই বার্তাই দিব। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এক ও অদ্বিতীয় এবং ছাত্রসমাজের কাছে বিকল্পহীন এক বিশ্বনেতা। ছাত্রসমাবেশে আইনের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই আমাদের আশার বাতিঘর।

সমাবেশে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হবে। এবিষয় জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সাইদ আল মাহমুদ বলেন, ছাত্র সমাবেশে প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হবে। তাদের জন্য একধিক মেডিকেল বুথ করার চিন্তা রয়েছে। বুথ থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের খাবার পানি, খাবার স্যালাইন, ব্যথা নাশক ওষুধ ফ্রিতে সরবরাহ করব। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সেদিন সমাবেশে অংশ নিবে।

সমাবেশের বিস্তারিত তুলে ধরতে সংসাদ সম্মেলন করবে ছাত্রলীগ। আজ সকাল ১১ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানিয়েছে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সব সদস্য ও নেতাকর্মীকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা যেভাবে ছাত্রসমাবেশে আসবে: ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে বাসযোগে সমাবেশে আসবে। তাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যবস্থা করা হবে। বরিশাল বিভাগ থেকে আসবে লঞ্চযোগে। তারা সদরঘাট থেকে নেমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। খুলনা বিভাগ থেকে বাসযোগে আসবে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বাস এবং ট্রেনযোগে আসবে। রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগ থেকে বাস এবং ট্রেনযোগে আসবে। ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে সমাবেশস্থলে আসবে।