সংকটের ৬ বছর

টেকনাফে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

সমাবেশে হাজারো রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরতে স্লোগান দেয়

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ ও সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার

রোহিঙ্গা সংকটের ৬ বছরে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পের মধ্যে ১৩টি স্থানে সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে এমন আয়োজন দেখা যায়। সমাবেশে ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি বক্তারা বলেন, জন্মগত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিক আমরা, গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এটা রিফিউজি জীবন। এমন জীবন চাই না, স্বদেশ মিয়ানমারে দ্রুত ফিরতে চাই। এর জন্য আন্তর্জাতিক সব মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়া লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে এ সমাবেশে শিশু-কিশোরসহ হাজারো রোহিঙ্গা অংশ নিয়ে স্বদেশে ফিরতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। যেখানে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দ্রুত শেষ করার দাবিও জানানো হয়। লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, আরাকান রোহিঙ্গা পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের। বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ, নারী সদস্য জমালিকা বেগম, মোহাম্মদ মুসা, মাস্টার শোয়াইব।এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন বলেন, অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা আর রিফিউজি জীবন চাই না। নিজ দেশে গিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই। কারণ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নই, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের নাগরিকত্ব আর নিজ গ্রামের ভিটেমাটি ফেরত দিলেই আমরা দ্রুত দেশে ফিরে যাব। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার কালক্ষেপণ করছে। দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু না করলে আমরা দল বেঁধে বাংলাদেশে এসেছিলাম, ওইভাবে দল বেঁধে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাব।

আর এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ মুসা বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে ২০১৭ সালে চরম বর্বরতার গণহত্যার কারণে নিজেদের ভিটেবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। ছয় বছর হয়েছে আর না। পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাস চাই। সমাবেশে ৫ দফা উপস্থাপন করেন, আরাকান রোহিঙ্গা পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের। এ ৫ দফা হলো, রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাশন, জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন, রাখাইন স্টেটে নিজেদের ভিটেবাড়ি এবং নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। তিনি ২৫ আগস্টকে গণহত্যা ও কালো দিবস আখ্যায়িত করে তারা নিজ ভূমি মিয়ানমারের আরাকানে ফিরে যেতে চায় এবং গণহত্যার বিচার দাবি করেন।

এছাড়া উখিয়ার পালংখালীর জামতলী, ময়নারঘোনা, টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে বড় সমাবেশ হয়েছে। এ সময় তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

এসব সমাবেশে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এসব সমাবেশে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে আল্লাহর কাছে মোনাজাতে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া হবার ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সমাবেশের আয়োজন। এর আগে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ। পরে তিনি মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়।