সূর্য ও চাঁদ দেখেই সময় বলতে পারেন ফেনীর পরশুরামের যুবক ইসমাইল হোসেন আশিক। কোনো রকম প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া হুবহু সময় বলা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই যুবকের কাছে বিষয়টি কোনো ব্যাপারই না। যাকে স্থানীয়রা ‘সময়ের জাদুকর’ হিসেবেই চেনেন। জানা গেছে, আশিক প্রাথমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও তার রয়েছে বিরল কিছু প্রতিভা। যা দেখে স্থানীয়রা রীতিমতো বিষ্মিত। আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু ঘণ্টা নয়, মিনিট ও সেকেন্ডসহ হুবহু সময় বলে দিতে পারেন এ বিষ্ময়কর যুবক। রাতেও চাঁদ দেখে বলতে পারেন সময়। গত বুধবার সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় অদ্ভুত এই যুবকের সঙ্গে। দিনের একাধিক সময় আশিককে সময় বলতে বললে তিনি সঠিক সময় বলেই চমকে দেন সবাইকে। মানুষ ঘড়ির কাঁটায় সময় নির্ধারণ করলেও বিস্ময়কর এই যুবক আকাশের দিকে তাকিয়ে সময় বলে দিতে পারেন। এছাড়াও ৯৯, ৮৯, ২৫৯ সহ নানা অংকের নামতা অনর্গল বলতে পারেন আশিক। বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক খেলায়ও তিনি অসম্ভব পারদর্শী। তাকে এসব খেলায় এখন পর্যন্ত হারাতে পারেনি কেউ। বিস্ময় যুবক ইসমাইল হোসেন আশিক উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের ভূঞা বাড়ির মো. ইব্রাহীম ভূঞার ছেলে। ইব্রাহীমের এক ছেলে, দুই মেয়ে। আশিক সবার বড়। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর আশিকের বাবা মারা যান। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় অনেকটা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবদুর রহিম জানান, আশিক শুধু সময় নয়, আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টা, মিনিট এমনকি সেকেন্ড পর্যন্ত হুবহু বলতে পারেন। একইভাবে তিনি রাতে চাঁদ দেখেও সময় বলতে পারেন। চিথলিয়া নাসির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার হোসেন বলেন, আশিকের রয়েছে আরো নানা ধরনের প্রতিভা। ১ থেকে ১০০০ এর নামতা কোনো ক্যালকুলেটর কিংবা খাতাণ্ডকলমের হিসাব ছাড়াই অনর্গল বলে দিতে পারেন। কয়েকটি গাণিতিক খেলায় রয়েছে তার অসাধারণ দক্ষতা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কোনো শিক্ষার্থীই প্রতিযোগিতায় তাকে হারাতে পারে না। ইসমাইল হোসেন আশিকের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ১৯৯৯ সালে আশিকের জন্ম হয়। ১২ বছর বয়সে তার হঠাৎ জ্বর হলে প্রায় এক সপ্তাহ অচেতন অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তারপর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে আশিক। এরপর সে আর পড়ালেখা করেনি। ফিরোজা বেগম আরো বলেন, সংসারে অভাব অনটনের কারণে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার অদ্ভুত কাজ-কর্ম দেখে মানুষ প্রতিদিন তাকে দেখতে আসে। তাকে বিভিন্ন নামতা জিজ্ঞেস করে। সে এক থেকে হাজার পর্যন্ত সব ধরনের নামতা জানে। এছাড়াও আকাশের দিকে তাকিয়ে সময় বলতে পারে। প্রতিদিন ভোরে উঠে মসজিদে জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করে। অন্য নামাজগুলোও সে জামাতে আদায় করে। সারা দিন ঘুরে বেড়ায়, তবে কোনো কাজ করতে পারে না। পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, আশিকের বিরল কিছু প্রতিভা রয়েছে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু ঘণ্টা নয়, মিনিট ও সেকেন্ড পর্যন্ত হুবহু বলে দিতে পারে। এমন বিষ্ময়কর মানুষ আমি আর দেখিনি। পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, আমার জানামতে ছেলেটি প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকে। তাকে আরো সরকারি নানা সুবিধার আওতায় আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করব।