মানুষের মতো পাখিরাও জীবনসঙ্গী বেছে নেয়। তাদেরও হয় বিচ্ছেদ। জড়িয়ে পড়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে, গড়ে তোলে পরিবার। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফাটল ধরতেও সময় নেয় না সেই সম্পর্কে। ভালোবাসার সম্পর্ক মোড় নেয় ‘বিচ্ছেদে’। গেল মাসে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত চীন ও জার্মানির এক যৌথ গবেষণাবিষয়ক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার পাখিকে এখন জীবনসঙ্গী ছাড়াই দেখা যাচ্ছে। বিস্তৃত পাখির প্রজাতিজুড়ে বিচ্ছেদের প্রধান দুটি কারণ পাওয়া গেছে বলে জানান গবেষকরা। একটি হলো ‘দীর্ঘ-দূরত্বে স্থানান্তর’। অন্যটি ‘পুরুষ প্রমিসকিউটি’ (অন্য প্রজাতির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলা)। জীববৈচিত্র্যবিষয়ক প্রসেডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি জার্নাল অনুসারে, চীন ও জার্মানির গবেষকরা মৃত্যুর তথ্য ও অভিবাসন দূরত্বসহ ২৩২ প্রজাতির পাখির বিচ্ছেদের হার সম্পর্কিত পূর্ব প্রকাশিত ডাটা তুলে ধরেন, যা পাখিদের আচরণ সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। গবেষণা দলটি প্রতিটি প্রজাতির পুরুষ ও মহিলা পাখিদের একটি পৃথক প্রমিসকিউটি স্কোর দেয়। বিবর্তনীয় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেও একটি বিশ্লেষণ চালানো হয়।
ফলাফলগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, উচ্চ বিচ্ছেদের হারসহ প্রজাতিগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে থাকে। প্লোভার, সোয়ালো, মার্টিন, ওরিওল ও ব্ল্যাকবার্ড প্রজাতির মধ্যে উচ্চবিচ্ছেদের হার লক্ষ্য করা যায়। এসব প্রজাতির ‘পুরুষ প্রমিসকিউটি’ও ছিল উচ্চমাত্রায়। অন্যদিকে পেট্রোল, অ্যালবাট্রস, গিজ ও রাজহাঁসের বিচ্ছেদের হার কম। দলটি আরো জানায়, অভিবাসন দূরত্ব বেশি হলেও বিচ্ছেদের হার বাড়ে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরের ফলে প্রাথমিক আগমন অন্য সঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গম করাতে পারে, যার ফলে বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ পূর্ববর্তী অংশীদারদের জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন সম্পর্ক প্রজনন সহজতর করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ড. সামান্থা প্যাট্রিক গবেষণাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।