ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাটের দাম বাড়ানোর দাবি

কুষ্টিয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

কুষ্টিয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

গত দুই মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেলেও এবার কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষক। বাজারে পাটের যে দর, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তাই পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, পাট বিক্রি করে খরচের টাকায় না উঠায় অগামীতে পাট চাষে আগ্রহ ও উৎসাহ হারাবে কুষ্টিয়ার চাষিরা।

কৃষি বিভাগ ও কৃষকের তথ্য মতে জানা যায়, কুষ্টিয়ায় পাট চাষে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। মজুরির ব্যয় বেশি, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। ১ মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বাজারে পাটের দাম নিম্নমুখী। গত বছর এ সময় পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ ছিল। এক বছরের ব্যবধানে পাটের দাম প্রতি মণে প্রায় ১ হাজার টাকা কমেছে। এতে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা।

স্থানীয় কৃষক মনজের হোসেন জানান, আমার ১ বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যয়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রয় ১৫ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ৬ মণ। ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে ৬ মণ পাট বিক্রি করে ৯ হাজার টাকা হয়েছে। আমার ৬ হাজার টাকা লোকসান। গত বছরের তুলনায় পাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমার মতো সব পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। যে ফসলে লোকসান, সেই ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দেবে কৃষক।

দৌলতপুর উপজেলার কয়েকজন পাট চাষি বলেন, পাট চাষ করে আমাদের পোষাচ্ছে না। পাটের দাম গত মৌসুমের দামের অর্ধেক। পাট চাষিদের লোকসান হচ্ছে। বাজারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদাও কম। ব্যবসায়ীরা পাটের প্রতি তেমন আগ্রহী না। পাট চাষিদের প্রতি সরকার নজর দিক, দাম বৃদ্ধি করে দিক। লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে আগামীতে অনেকেই পাট চাষ করা বন্ধ করে দেবেন।

পাট ব্যবসায়ী মোমিন হোসেন বলেন, গত বছরে কেনা পাট আজও গোডাউনে ভরা। অনেক ব্যবসায়ী গত বছরের পাট বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই বিপাকে পড়েছে। কৃষকের লোকসান হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারছে না তারা। গত বছর এ সময় পাটের দাম ছিল প্রতিমণ ২ হাজার ৫০০ টাকা, এ বছর প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, গত মৌসুমে এ সময়ে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। গত বছরের সেই পাট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেননি। ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছেন, এজন্য পাট ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে এ বছরে পাটের গুণগত মানও তুলনামূলক কম। এবার পাট চাষিদের লোকসান হচ্ছে, দাম অনেক কম। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.হায়াত মাহমুদ বলেন, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছরে ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। জেলায় এ বছর পাট চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৩৬ একর কম চাষ হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছে। পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত