সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান গত রোববার রাত ১১টায় ময়মনসিংহ শহরের নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান তার ফেসবুক পেজে মতিউর রহমানের মৃত্যুর খবর জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০২২ সালে একুশে পদক পান তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য মতিউর রহমান ‘মুজিব দর্শন বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্তৃক ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ পান।
তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। তার মৃত্যুতে ময়মনসিংহে শোকের ছায়া নেমে আসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ সদর আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ষীয়ান এ নেতার মৃত্যুর খবরে তার বাসভবনে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সফল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। তিনি শহীদ আলমগীর মনসুর মিন্টু কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গতকাল আসরের নামাজের পর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে তার মরদেহ রেখে দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে দুই মেয়ে দেশে ফেরার পর আজ বাদ আসর আকুয়া মড়ল পাড়ায় পরিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। জানাজাস্থলে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপতির শোক : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোক বার্তায় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শিক্ষা বিস্তারে মতিউর রহমানের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন ‘একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষানুরাগীর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। জাতি তাকে চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মতিউর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা ছিলেন। তিনি বলেন, শত প্রলোভনের মুখে এবং বারবার কারাবরণ করা সত্ত্বেও সারাজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অবিচল থেকে তিনি তার সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিন দশকের বেশি সময় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদানকারী এই নেতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সফল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মৃত্যুতে দলের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো এবং আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে। শেখ হাসিনা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সর্বস্তরের নেতাদের শোক : এছাড়া সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল পৃথক শোক বার্তায় তারা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
তার মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস শোক প্রকাশ করেছেন। শোক প্রকাশ করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মহাঃ বশিরুল আলম।