ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কর্ণফুলী জুট মিলের সুতা যাচ্ছে বিশ্বের ১২টি দেশে

গত বছরের আয় সাড়ে ৮৫ লাখ ডলার
কর্ণফুলী জুট মিলের সুতা যাচ্ছে বিশ্বের ১২টি দেশে

পাটকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় সেই পাট থেকে সুতা উৎপাদন করে বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর থেকে শুধুমাত্র গেল বছরেই আয় হয়েছে সাড়ে ৮৫ লাখ ডলার। ভবিষ্যতে পাট থেকে পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করে আরো বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের প্রাচীনতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী জুটমিল থেকে এই সুতা উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের অধীনস্থ ২৬টি মিলের মধ্যে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম প্রধান পাটকল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে এটি ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে বরাদ্দ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। বর্তমানে ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে এক হাজারের উপরে শ্রমিক। যেখানে দুটি শিফটে দৈনিক ৩০ টনেরও বেশি জুট থেকে সুতা উৎপাদিত হয়। যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুর্কি, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরো বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বেসরকারি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।

এই বিষয়ে কথা হয় ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাট্রিজ গ্রুপের ডিজিএম মো. ফখরুদ্দিন এসিএ বলেন, ‘কর্ণফুলী জুটমিল দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান। আমরা বরাদ্দ নেয়ার আগে এটি দুই বছর বন্ধ ছিল। এর আগে এই মিল থেকে মাত্র ৬ টন সুতা উৎপাদিত হতো। আমরা ইউনিটেক্স গ্রুপ দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে এই মিলের উৎপাদন ৩০ টনে উন্নীত করেছি। ভবিষ্যতে দৈনিক ১০০ টন সুতা উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ৩০ টন হিসেবে বছরে আমাদের উৎপাদন সাড়ে ১০ হাজার টনেরও বেশি। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে শতভাগ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকি। শুধুমাত্র গত বছর আমরা ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছি।’

ইউনিটেক্স জুট ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন অ লের কৃষকদের থেকে সরাসরি পাট সংগ্রহ করি, এতে কৃষকরা পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছে। এছাড়া আমাদের মিলে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আরো বেশি পরিমাণ মানুষ উপকৃত হবে। সোনালী আঁশের যেই ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনতেই আমরা মূলত কাজ করে যাচ্ছি।’ ইউনিটেক্স জুট ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পাটকে আমরা প্রথমত বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করি। সুতার পণ্য তৈরি করার জন্য পাটকে গ্রেডভিত্তিক ভাগ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতাগুলো তৈরি করে মিল থেকেই প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। ইউনিটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক (লিগ্যাল অ্যান্ড এস্টেট) গোলাম মাওলা বলেন, শ্রমিকদের জন্য মিলে রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মানসম্মত শ্রমিক কলোনি ও স্টাফ কোয়ার্টার। মিলের ভেতর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, মশা নিধনে নিয়মিত পগার মেশিনের সাহায্যে স্প্রে কার্যক্রমসহ নানাভাবে কর্ম উপযোগী পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। সরেজমিন গেলে দেখা যায়, মিলে সুতা তৈরির জন্য চলছে বিভিন্ন ধরনের কর্মযজ্ঞ। ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাটগুলো আনা হচ্ছে। কিছু শ্রমিক সেই পাটগুলো নামাচ্ছেন আবার কেউ কেউ পাটগুলোকে গ্রেডভিত্তিক ভাগ করে পরিমাপ অনুযায়ী কেটে নিচ্ছেন। সেখান থেকে পাটগুলো ভ্যানে করে মূল মিলে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তারপর নানা প্রক্রিয়া শেষে সুতা তৈরির নানা কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিককে। শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৭) বলেন, এক সময় বেকার ছিলাম। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। জুটমিল নতুন করে চালু হওয়ায় আয়ে সংসার চলছে। খুব ভালো আছি। জুটমিলের প্রশাসন ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন বলেন, সরকারকে মাসিক নির্ধারিত হারে ভাড়া দিয়ে এই মিলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি আমরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মিলের স্থাপনাগুলো ৫০-৬০ বছরের পুরোনো হওয়ায় ছাদ নষ্ট হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে, কর্ণফুলী পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে শ্রমিক কলোনি, সীমানাপ্রাচীর এমনকি বহুতলবিশিষ্ট অফিসার্স ভবন ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত