ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মহেশখালীতে নতুন জেটি নির্মাণের উদ্যোগ

ব্যয় হবে ৩৭ কোটি টাকা বন বিভাগের আপত্তি

ব্যয় হবে ৩৭ কোটি টাকা বন বিভাগের আপত্তি

কক্সবাজার জেলা শহরের সঙ্গে মহেশখালী দ্বীপের যাতায়াতের অন্যতম পথ নৌরুট। এই রুটে মহেশখালী জেটি ঘাটে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বর্তমানে জরাজীর্ণ জেটির কারণে এমন ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। ফলে বিভিন্ন সময় ব্রিজ, ফেরি চলাচলের দাবি উঠেছিল। ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া আর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গেল ২৫ জুন দেশের গর্ব পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে মহেশখালীবাসী ফেরির দাবি করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জাতীয় সংসদে পদ্মা ব্রিজের জন্য বেকার হয়ে পড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরি কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে চলাচলের জন্য প্রদানের দাবি জানান, নৌমন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে নতুন করে একটি জেটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু এই জেটি নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছে বন বিভাগ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রজেক্টের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে মহেশখালীর নতুন জেটি নির্মাণ কাজ। এই জেটি নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে গেল ৭ ফেব্রুয়ারি। টেন্ডারের ডিজাইন বা অন্যান্য ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকলে সেই মিটিংয়ের ধার্য তারিখ ছিল ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১ মার্চ বেলা ১২টা পর্যন্ত টেন্ডারটি কিনে অংশ নেয়ার শেষ সময় ছিল এবং একই দিন টেন্ডারটি খোলা হয়েছে। জেটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে আগামী ২০২৪ সালের ২৭ জুনের দিকে।

প্রায় ৩৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বর্তমানে জরাজীর্ণ জেটির ডান পাশ দিয়ে এই নতুন জেটি নির্মাণ করা হবে। জেটির মাথা বা টার্মিনাল পার্ক (যেখানে আই লাভ মহেশখালী লেখা রয়েছে) থেকে প্রায় ৩০০ মিটার আরসিসি সড়কের পর টার্মিনাল পার্ক হবে।

এরপর জেটির মূল অংশ শুরু হবে। সড়কের উভয় পাশে ব্লক ও গাইড পোস্ট ব্যবহার করা হবে। দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ মিটার, এটি কক্সবাজার-মহেশখালী-বদরখালী নৌরুটের ত্রি-মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। জেটির শেষ মাথায় আধুনিক মানের একটি প্লাটফর্মও নির্মাণ করা হবে, যেখানে থাকবে যাত্রী ছাউনি, টয়লেটসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা।

কিন্তু এ জেটি নির্মাণের জন্য কাটতে হবে কয়েক হাজার প্যারাবনের বাইন গাছ। ফলে জেটি নির্মাণের ক্ষেত্রে লিখিত আপত্তি জানিয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগ।

উপকূলীয় বন বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান গত ৩১ জুলাই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজার জেলা বরাবরে এই আপত্তি পত্রটি প্রেরণ করে। যেখানে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বিদ্যমান ফ্লেটি ঘাটের দক্ষিণ পাশে একটি নতুন জেটিঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বর্তমানে বিদ্যমান জেটিঘাটের দুই পাশে বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবন রয়েছে, যা ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হতে উপকূলবাসীকে সুরক্ষা প্রদানসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওই স্থানে নতুন আরেকটি জেটিঘাট নির্মাণের নিমিত্তে গাছ কর্তনের প্রয়োজন হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক। এই অনুমতি ব্যতীত নতুন জেটিঘাট নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য পত্রে বলা হয়েছে।

এমন পত্র পাঠানো সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেছেন, বর্তমান জেটির স্থানে নতুন জেটি নির্মাণ করা হলে তাতে প্যারাবনের কয়েক হাজার বাইন গাছ কাটতে হবে। যা ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে বন বিভাগ সৃজন করেছে। এসব বাইন গাছকে উপকূল রক্ষার মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান জানান, ৩৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বর্তমানে জরাজীর্ণ জেটির ডান পাশ দিয়ে এই নতুন জেটি নির্মাণ করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বন বিভাগের আপত্তিপত্র হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়েছে। উভয়পক্ষ আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা চলছে।

এদিকে নতুন জেটি নির্মাণের আপত্তি রয়েছে স্থানীয়দেরও। তারা বলেছেন নতুন জেটি না ব্রিজ বা ফেরি সার্ভিস চান তারা।

এ ব্যাপারে মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম জানান, ব্রিজ ও ফেরি হলে কিছু ব্যক্তির ক্ষমতা জাহির কমে যাবে তাই এটির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রুটি-রুজি, চাঁদাবাজির ভিত্তি মজবুত করতে নতুন জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

মহেশখালীর সাংবাদিক ফরিদুল আলম দেওয়ান বলেন, মহেশখালী উপকূলের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে ফেরি সার্ভিস তথা গণপরিবহন চালু করে জনগণের স্বল্প খরচে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা। এ দাবির পাশ কেটে ফেরি সার্ভিস চালুর পরিবর্তে নতুন জেটি নির্মাণ করা সর্বসাধারণের কাঙ্খিত উপকারে আসবে না। উপকূলের মানুষ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিরাপদভাবে তাদের মালামাল ও যানবাহন পারাপারের সুবিধাটাই দাবি করেছিল সরকারের কাছ থেকে। তা না করে জেটি নির্মাণ কাজ করা মানে রোগীর রোগের চিকিৎসা না করে তাকে দামি দামি পোশাক পরিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার সামিল বলে মনে করি। এতে উপকূলবাসীর সমস্যা তিমিরেই রয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত