অন্যরকম
ফুরিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বালি!
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
আমাদের চারপাশেই উড়ে বেড়ায় বালি! পরিবেশবিদরা মনে করেন, পানির পর সবচেয়ে বেশি হেলাফেলা করা হয় এই প্রাকৃতিক সম্পদকে। নষ্টও হয় সবচেয়ে বেশি। অথচ এই বালি না থাকলে কিন্তু দুর্গতির শেষ থাকবে না। এর জন্য প্রাণ নিয়েও হয়েছে টানাটানি। আধুনিক প্রযুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে সিলিকনের। সিলিকনের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম বা লোহা মিশিয়ে তৈরি করা হয় ডায়নামো, ট্রান্সফরমার প্লেটস, ইঞ্জিন ব্লকস, সিলিন্ডার, যন্ত্রের টুল, ডিঅক্সাইড ইস্পাত। এই সিলিকনেরও কিন্তু অন্যতম উপাদান হলো বালি। বড় বড় ইমারত, আবাসন, সেতু, উড়ালপুল। এই সবের অন্যতম উপাদান হলো বালি। এটি ছাড়া কংক্রিটের ইমারত তৈরি সম্ভব নয়। বালির সঙ্গে চুনাপাথরসহ আরো বেশ কিছু উপকরণ গলিয়ে, রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয় কাচ। সুতরাং, কাচ তৈরির অন্যতম উপকরণও হলো বালি। এসব কারণে দৈনন্দিন জীবনে বালির গুরুত্ব খুব বেশি। আমরা এই বিষয়ে ততটা সচেতন না হলেও এই প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করতে পারব না। আর সেই প্রয়োজনের কারণে নদীখাত, সমুদ্রসৈকত থেকে নিয়মিত তোলা হচ্ছে বালি। রোজ যত পরিমাণ বালি উত্তোলন করা হয়, তত পরিমাণ কিন্তু তৈরি হয় না। সেখানেই বাড়ছে সমস্যা।
জাতিসংঘের পরিবেশ প্রকল্প (ইউএনইপি) বলছে, গত দুই দশকে বালির চাহিদা আগের থেকে বেড়েছে তিন গুণ। ২০১৯ সালে পৃথিবীতে বালির চাহিদা ছিল ৫ হাজার কোটি টন। নির্মাণের ক্ষেত্রে এক টন সিমেন্টের সঙ্গে তার সাত থেকে আট গুণ বালি মেশাতে হয়। তবেই মজবুত হয় নির্মাণ। ইউএনইপি জানিয়েছে, ২০১২ সালে বালি দিয়ে যত নির্মাণ হয়েছে, তা যোগ করলে গোটা পৃথিবীর চারপাশে বিষুবরেখা বরাবর ৮৮ ফুট উঁচু প্রাচীর দেওয়া যায়। আর এই নির্মাণের জন্য পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে যথেচ্ছ বালি উত্তোলন করা হয়। যতটা প্রয়োজন, তার থেকে অনেক বেশি বালি উত্তোলন করা হয়। তার পর তার বেশির ভাগ নষ্ট হয়। এই যথেচ্ছভাবে বালি উত্তোলনের ফলেই ভুগছে পৃথিবী। বেড়েছে বন্যার প্রকোপ। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড বলছে, যথেচ্ছ বালি তোলার কারণে মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে বন্যার প্রবণতা বাড়ছে। নদীগর্ভ থেকে ক্রমাগত বালি উত্তোলনও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে পরিবেশকে। ডব্লিউডব্লিউএফ ভূতত্ত্ববিদ মার্ক গোয়চট জানিয়েছেন, নদীগর্ভে বালি থাকলে তা জলবায়ুর পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে পারে। নদীর ব-দ্বীপে যথেষ্ট পলি, বালি থাকলে তবেই তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে থাকে। এর ফলে সমুদ্রের নোনাজল ঢুকতে পারে না নদীতে। নদীগর্ভ থেকে বালি তোলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানকার বাস্তুতন্ত্র। নদীতে বসবাসকারী মাছ, প্রাণী, উদ্ভিদ মারা পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে বহু বিরল প্রাণী। এমনকি মাছের সংখ্যাতেও টান পড়তে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।