জাতীয়াতাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন বিষয়ে আগামী ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন।
‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে দেয়া বক্তব্যকে ইস্যু করে আপিল বিভাগের দুই বিচারকের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী সংগঠন।
এসব কর্মসূচি আদালত অবমাননার সামিল উল্লেখ করে বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি গত মঙ্গলবার দাখিল করা হয়। আদালতে গতকাল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা সাত আইনজীবী হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল। আবেদনটি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে গতকাল আপিল বিভাগে শুনানির জন্য কার্য তালিকায় ছিল।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গত ২৭ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দেয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা আবেদনটি করেন। এতে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার, লিফলেটসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিছিল ও অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়। আবেদনের পক্ষের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের শেষ ভরসাস্থল সুপ্রিমকোর্ট। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশে বিচারকদের নিয়ে বক্তব্য কাম্য নয়। সবারই সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা।
গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চের বিচারপতিরা আসন গ্রহণের পর ক্রমানুসারে বিষয়টি ডাকা হলে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যূথী শুনানির জন্য ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, অবমাননার আবেদনের ওপর অবকাশের পর শুনানি হবে। পরে আদালত আগামী ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য রেখে আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোটের স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের ওই রায়ে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ শুরু হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটিসহ অবকাশ শেষে ৮ অক্টোবর নিয়মিত আদালত বসবেন।
অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি এমএ মতিনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়ের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে বলেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের সারাংশ অনুসারে আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ঘেরাও, প্রিকেটিং, সমাবেশ অথবা এমন কোনো কাজ, যা বিচারকাজে বাধা প্রদান করে, তা করতে পারবে না। আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং, প্রিকেটিং করতে পারবে না। এ ছাড়া যারা আদালত অবমাননা করবে, তারা বাংলাদেশের কোনো আদালতে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না, ওই রায়ে রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় ছিল, সব আদালত প্রাঙ্গণে মাইক ব্যবহার করা যাবে না, মিছিল-মিটিং করা যাবে না। এই আদেশ অমান্য করে কোনো কাজ করলে আদালত অবমাননা হবে। অবমাননার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের আদালতের কার্যক্রম থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন।