করলা চাষে লাভবান হচ্ছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৯টি গ্রামের অসংখ্য কৃষক। ওই সব গ্রামের চারদিকে তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ ও হলুদের সমারোহ। আর করলা চাষের সফলতায় হাজার হাজার পরিবারের মুখে ফুটেছে হাসি আর স্বস্তি। খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, বালাডাঙ্গী, পূর্ব ডাঙ্গাপাড়া, হোসেনপুর, খামারপাড়া, নেউলা, তেবাড়িয়া, গোবিন্দপুরসহ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, করলার ক্ষেতে কৃষকদের ব্যস্ততা। কেউ ক্ষেত নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ আবার নতুন বীজ বপন করছেন। ওই গ্রামগুলো এখন করলার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন এসব গ্রাম থেকে শতশত মণ করলা ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, কমপক্ষে ১০ হাজার কৃষক পরিবার করলা চাষ করে সফলতা পেয়েছে। অল্প সময়ে বেশি লাভের কারণে করলা চাষ করেই সফল হয়েছেন তারা। নেউলা গ্রামের কৃষক হাচানুর রহমান জানান, শুরুতে প্রতি মন করলা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে তিনি বিক্রি করছেন। ৫০ শতক জমিতে করলা চাষে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ যাবত প্রায় ১ লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছে। আরো কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি। একই গ্রামের কৃষক কাজিমুদ্দিন বলেন, এবার করলা খেতে পোকাণ্ডমাকড়ের উৎপাত কম, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম। তাই কীটনাশক খরচও কম। তবে ফলন হয়েছে বেশি। তিনি জানান, এবার তিনি ৫০ শতক জমিতে করলার বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক ও জমি তৈরি বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এ যাবত ২ লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছে।
বাজার ভালো থাকলে আরো ১ লাখ টাকার করলা বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। করলাকে কেন্দ্র করে উপজেলার পাকেরহাট, বটতলী বাজার, পাঁচপীর বাজার, বুড়িরবাজার, তেবাড়িয়া, বাহাদুরবাজার, মরিয়মবাজারে প্রতিদিন বিশাল পাইকারি বাজার বসে। বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার এখান থেকে করলা কেনেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব সময় কৃষকদের নানান পরামর্শ দেয়া হয় জানিয়ে খানসামা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, চলতি মৌসুমে করলা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বছর করলা চাষে কোনো সমস্যা হয়নি, রোগবালাই ছাড়াই ভালোভাবে চাষ করতে পেরেছেন চাষিরা। এ বছর উপজেলায় খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে ২২০ হেক্টর জমিতে করলার চাষ হয়েছে, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এই মৌসুমে খানসামা উপজেলায় ৫ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন করলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।