৯০ টাকায় ৩১৫ গ্রাম ডাবের পানি

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিংরোড, কৃষি মার্কেট এলাকায় ডাবের দোকান বেশ কয়েকটি। এরই মধ্যে কৃষি মার্কেটের পেঁয়াজ-আলুর আড়তের সামনে একটি ভ্যানে ডাব বিক্রি করছেন এক প্রবীণ। ডাবের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২০ টাকা আর ১৩০ টাকা। মিনিট পাঁচেক দর কষাকষি করলেও দাম কমেনি এক টাকাও। তবে মিলেছে কিছু তথ্য। দোকানি জানান, রায়েরবাজারের সাদেক খান বাজার থেকে ডাব কিনেছেন তিনি। প্রতি পিস কেনা পড়েছে ১০০ টাকা। দোকানি বলেন, মেমো আছে বাসায়। ১০০ টাকায় কিনা আনছি। ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ তো করাই লাগবে। আশপাশের আরও বেশকিছু দোকানে ডাবের দাম দেখা গেছে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। দোকানিদের ভাষ্য, গত দুই-তিন দিনের চাইতে আজ দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সবচেয়ে কম দামে ডাব পাওয়া গেল কৃষি মার্কেট প্রিন্স বাজারের সামনে। ডাব বিক্রি করছেন এক কিশোর। ১৩ বছর বয়সি কিশোরের নাম শামীম। মূল দোকানি তার বাবা হলেও প্রায়ই দোকানি বনে যান শামীম। ডাবের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০০ টাকা পিস। যেইডা নেন। মিনিট দুয়েক দর কষাকষি করতে ১০ টাকা দাম কমান শামীম। ৯০ টাকা দরে ডাব কেনা হয়। ডাবের পানি একটা প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম গ্লাসে ঢালা হয়। তবে গ্লাসটি পূর্ণ হয়নি। পাশের একটি ফলের দোকানে গ্লাসসহ ডাবের পানি পরিমাপ করে দেখা যায়, ওজন ৩২২ গ্রাম। খালি পাত্রের ওজন ৭ গ্রাম। সে হিসেবে ৩১৫ গ্রাম ডাবের পানির পেছনে খরচ ৯০ টাকা। যে দোকানে ডাবের পানি পরিমাপ করা হয়, সে দোকানি বলে ওঠেন, অনেক পানি পাইছেন। দেড়শ’ টাকার ডাবেও এত পানি হয় না। প্রসঙ্গত, ডাবের দামের কারসাজি সম্প্রতি নানা মহলে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পরেই ডাবের দামে নাস্তানাবুদ জনগণ। হাসপাতাল এলাকায় একেকটি ডাব বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় সংস্থাটির দৃষ্টিগোচর হয়, কেনা দাম ও বিক্রি দামের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। পরে মাঝরাতেও কারওয়ান বাজারে হানা দেয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দেখা যায়, ডাব কেনা পরে ৪০ থেকে ৭০ টাকা। আর সেই ডাব দিনের বেলা নগরে বিক্রি হয় দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকায়। গত সোমবার ডাব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সংস্থাটি। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান এ সময় বলেছেন, ডেঙ্গু সংক্রমণের সুযোগ নিয়ে হঠাৎ করেই ডাবের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। অসহায় রোগীদের জিম্মি করে ডাব ব্যবসায়ীদের অনৈতিক এ অতিমুনাফা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে কারওয়ান বাজার আড়তে অভিযান চালিয়ে পাইকারি পর্যায়ে ডাবের সর্বোচ্চ মূল্য প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো মানের ডাব খুচরায় সর্বোচ্চ ১০০ টাকার বেশি হতে পারে না, যা বাজারে দ্বিগুণ পর্যন্ত দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, ডাব কেনাবেচায় কোনো রকম পাকা ভাউচার কিংবা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ রাখা হয় না। এ সুযোগে ডাবের আড়ত, পাইকারি ও খুচরা প্রতিটি স্তরে মূল্যবৃদ্ধির এক মহোৎসব চলছে। আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে ডাব নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। ডাবের মূল্য কমতে শুরু করেছে। সফিকুজ্জামান বলেন, আমি সবাইকে বলছি যতক্ষণে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০০ টাকার মধ্যে না আসবে, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মনিটরিং জোরদার রাখব।