নতুন নামে ফিরবে বঙ্গবাজার হবে ১০ তলা ভবন
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন নামে ফের প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে আগুনে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। বিগত তিন দশকে বড় দুটি আগুনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ মার্কেট এবার পাবে বহুতল রূপ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এবার এখানে নির্মাণ করছে ১০ তলা ভবন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’। নতুন এ বিপণি বিতানে তিন হাজার ৪২টি দোকান থাকবে। আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ থাকবে নানা সুযোগ-সুবিধা।
দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতানের নকশা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নকশা অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বিপণি বিতান ভবন নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হবে। ভবনটি তৈরি করতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা।
সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তবে বিপণি বিতানের নির্মাণকাজ শুরু হলে ফের ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন বঙ্গবাজারের জায়গায় চৌকি বিছিয়ে, শামিয়ানা টাঙিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে এ ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। তাই সিটি কর্পোরেশন যাতে অস্থায়ীভাবে বিকল্প জায়গায় বসার ব্যবস্থা করে।
গত ৪ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন মালিকানাধীন বঙ্গবাজারে (বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের এনেক্সকো টাওয়ার মার্কেট (একাংশ), মহানগর শপিং কমপ্লেক্স (একাংশ), বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অগ্নিকাণ্ডে তিন হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান নির্মাণের নকশা তৈরির কাজটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আলাদা তিনটি প্রতিষ্ঠান এই নকশা তৈরির কাজ করছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে নকশা অনুমোদন দিতে পারব। আর নকশা চূড়ান্ত হলে চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরে এই বিপণি বিতান নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করার পরিকল্পনা আছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর (মার্কেট নির্মাণ সেল) সূত্র জানায়, ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর প্রস্তাবিত বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান নির্মাণ করা হবে। ১০ তলা এ বিপণি বিতানের বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটটি ফ্লোর থাকবে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত দোকান থাকবে তিন হাজার ৪২টি। এর মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি, সপ্তম তলায় ৩১৩টি। অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীদের আবাস ও অন্য কক্ষ রাখা হয়েছে।
এছাড়া প্রস্তাবিত নকশায় রাখা হয়েছে ২২টি খাবারের দোকানের জায়গা। এর বাইরে আরো ৮১টি দোকান বেশি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট। বিপণি বিতানটিতে লিফট থাকবে আটটি। এর মধ্যে ক্রেতাদের জন্য চারটি ও মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য কার্গো লিফট থাকবে চারটি। এর বাইরে ১১টি সিঁড়ি থাকবে। ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি থাকবে ছয়টি। এছাড়া প্রতিটি ফ্লোরে চারটি করে টয়লেট থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮৩টি গাড়ি পার্কিং ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ বর্গ ফুট আয়তনের এ ভবনটি তৈরি করতে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড।
ডিএসসিসির মার্কেট নির্মাণ সেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তৌহিদ সিরাজ জানান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেডও নকশা তৈরির কাজ করছে। এর বাইরে ডিপিএম ও রিফ্লেকশন অ্যান্ড ডিজাইন নামে আরো দুটি প্রতিষ্ঠানকে নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যাদের নকশা পছন্দ হবে, সেটাই ডিএসসিসি চূড়ান্ত করবে।
তিনি বলেন, ডিএসসিসির বিদ্যমান যেসব মার্কেট রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিকভাবে তৈরি করা হবে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান। আশাকরি শিগগির এ বিপণি বিতানের নকশা অনুমোদন দিতে পারব।