চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি বেড়েছে ৮ গুণ
ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারকে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি করতে হয়েছে। কিন্তু নতুন অর্থবছরের শুরুতে এ চিত্র পাল্টে গেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে বেড়েছে নিট বিনিয়োগের পরিমাণও।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এসেছে। আগের বছরের একই মাসে যেখানে নিট বিক্রি ছিল মাত্র ৩৯৩ কোটি টাকা। এর মানে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় এবার নিট বিক্রি বেড়েছে আট গুণের চেয়ে বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি। তাই সঞ্চয়কারীরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। পাশাপাশি আগের কেনা সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে আবারও নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। এছাড়া নির্বাচনি বছরে অন্যান্য খাতের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন অনেকে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও বিনিয়োগ বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদণ্ডআসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা; অর্থবছরের প্রথম মাসে এটা সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করছে সরকার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ১৭ হাজার কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৭ হাজার ১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি করেছিল। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬২৫ কোটি ৩২ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ ছিল ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ১২ মাসে ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করেছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদণ্ডআসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকার কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।
সঞ্চয়পত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অতি মাত্রায় সুদ পরিশোধ কমাতে গত ২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা শর্ত দেওয়া হয়। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ ঋণাত্মক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধিতে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বাজেটে ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্রের নির্ভরতাও কমিয়ে ফেলেছে সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। প্রথম মাসেই বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি সঙ্গে নিট বিনিয়োগ।