অসময়ের বেগুনের চাষ করে লাভবান হয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চারগোবরা গ্রামের কৃষক মো. সিরাজ শেখ (৫২)। তিনি প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সপ্তাহে দুই দিন তিনি খেত থেকে ৪ মণ করে বেগুন তুলে বজারজাত করছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া ও বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট বাজারের দুই হাটে তিনি প্রায় ২০ হাজার বেগুন বিক্রি করছেন। কৃষক মো. সিরাজ শেখের বেগুনের সাইজ ও গুণগতমান বেশ ভালো। খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে তার বেগুনের চাহিদা ব্যাপক। এ বেগুন হাটবাজারে একটু বেশি দামেই বিক্রি হয়। বিগত ৫ বছর ধরে তিনি তার জমিতে পাটের পরিবর্তে অসময়ের বেগুন চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে আসছেন। বাজারে এ সময়ে বেগুনের আমদানি কম থাকে। তাই বেগুনের বাজার দর ভালো পাচ্ছেন কৃষক মো. সিরাজ শেখ। সদর উপজেলার চারগোবরা গ্রামের কৃষক মো. সিরাজ শেখ বলেন, আমি ১ একর জমিতে আগে পাটের চাষ করতাম। পাটে ১ একরে খরচ বাদে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হত। তাই ৫ বছর আগে আমি পাটের চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছি। তারপর থেকে ওই ১ একর জমিতে অসময়ের বেগুনের চাষ করে আসছি। ১ একর জমিতে বেগুন চাষবাদে আমার ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি ১ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। এ খেত থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারব। বেগুনে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে। পাটের তুলনায় বেগুন চাষে লাভ ৩ গুণেরও বেশি হবে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। অধিক দামে অসময়ের বেগুন বিক্রি করে আমি লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারছি। বেগুন সাধারণত শীতের ফসল। গরমে বেগুন চাষাবাদে ব্যাপক পরিচর্যা করতে হয়। তাই এ সময়ে বেগুন চাষ খুব কম হয়। এ কারণে বাজারে বেগুনের আমাদনি কম থাকে। তাই আমি অসময়ে বেগুন উৎপাদন করে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, মো. সিরাজ শেখ ১ একর জমিতে ৪২২ ও ভাঙ্গ জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। খেতে ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়েছে। তাই কৃষকের কীটনাশক খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। কম খরচে কৃষক বেগুনের ভালো ফলন পাচ্ছেন। এছাড়া বাজারে বেগুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে কৃষক বেগুনের ভালো দাম পাচ্ছেন। পাটের পরিবর্তে তিনি বেগুনের আবদ করে অধিক টাকা ঘরে তুলছেন। অসময়ের বেগুন তাকে অর্থিকভাবে লাভবান করছে। চর গোবরা গ্রামের কৃষক মো. আয়ূব আলী বলেন, সিরাজ শেখ ৫ বছর ধরে ভালো সাইজ ও মানের বেগুন উৎপাদন করছেন। তিনি বেগুন উৎপাদনে খুবই কম মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করেন। ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকা দমন করেন। তাই তার ক্ষেতে উৎপাদিত বেগুন খুবই সুস্বাদু। তিনি উৎকৃষ্টমানের বেগুন উৎপাদনের সুনাম অর্জন করতে পেরেছেন। তাই বাজারে তার বেগুনের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একটু বেশি দামে বেগুন বিক্রি করে লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া বাজারের সবজি ক্রেতা আলীম চৌধূরী বলেন, বাজারে কৃষক মোঃ সিরাজ শেখের বেগুনের নাম ডাক রয়েছে। তার এ সুনামের জন্য আমরা বেশি দামে তার কাছ থেকে বেগুন ক্রয় করি। তার বেগুন কেয়ালিটি সম্পন্ন। আমাদের মতো ভোক্তার কাছে সিরাজ শেখের বেগুন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।