চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী (চবি) চলন্ত শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে অন্তত ২০ জন ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ছাদে গাছের ডালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তারা আহত হন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে চবি ক্যাম্পাস। গত বৃহস্পতিবার রাতেই একদল ছাত্র চবি উপাচার্যের বাস ভবন ভাঙচুর করে। বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল শুক্রবারও ক্যাম্পাসে খণ্ড খণ্ড প্রতিবাদ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ প্রয়োজনের তুলনায় শাটল ট্রেন কম হওয়ায় ছাদে ওঠেন ছাত্ররা। এতে দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেন সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগ না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা অভিযোগ করেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে শাটল ট্রেনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে। ছাদে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বসা ছিলেন। চৌধুরীহাট এলাকায় পৌঁছার পর গাছের ডালে ধাক্কা খেয়ে ছয়জন শিক্ষার্থী ট্রেনের ছাদ থেকে মাটিতে পড়ে যায়। তাদের সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চট্টগ্রামের রেলওয়ে পুলিশের এসপি হাছান চৌধুরী বলেন, আমরা বারবার অনুরোধ করি, ছাদে ভ্রমণ না করার জন্য। রাতের অন্ধকারে ছাদে ভ্রমণ অনিরাপদ। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ট্রেনের ছাদে কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। তারা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে। ট্রেন চলে গেছে। আহতের সংখ্যা এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানান, চৌধুরীহাট এলাকায় রেললাইনের জায়গায় গাছের ডালপালা ঝুলে ছিল। শাটল ট্রেন চৌধুরীহাট পার হওযার সময় ছাদে থাকা শিক্ষার্থীরা হেলে থাকা গাছের সঙ্গে আঘাত পেয়ে আহত হন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়। এছাড়া কয়েকজন চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান। আহতদের মধ্যে অন্তত সাতজনকে তাৎক্ষণিক ফতেহাবাদ ক্লিনিক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল কাফি বলেন, আমরা ছাদ থেকে তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় নামিয়েছি। এরমধ্যে দুইজনের মাথা ফেটে গিয়েছিল। আরেকজন পায়ে আঘাত পেয়ে পা নাড়াতে পারছিলেন না। ট্রেনের অন্য পাশ দিয়ে আরো তিনজনকে নামানো হয়। তারা অজ্ঞান ছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে চবি জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু চেয়ার ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। চবি উপাচার্যের বাংলোর সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় উত্তাল হয়ে পড়ে চবি ক্যাম্পাস। এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছালেই শিক্ষার্থীরা নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দেন। এ সময় তারা আগুন জ্বালিয়ে প্রশাসনের নিকট শিক্ষার্থী আহতের জবাব ও শাটল ট্রেনের বগি বাড়ানোর দাবি জানান। এছাড়াও জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা। রাতে শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা।