চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট সেতুর টেন্ডার নিয়ে চলছে তুঘলকিকাণ্ড। সেতুটি মেরামত করা হচ্ছে ৩ মাস সময় নিয়ে। এজন্য ১ আগস্ট থেকে সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মেরামত শেষ করার কথা ৩১ অক্টোবর। সেতু বন্ধের পর নিচ দিয়ে অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীতে চালু করা হয়েছে ফেরি সার্ভিস। ফেরি সার্ভিস পরিচালনার ঘাট ইজারা প্রদানের টেন্ডার তিন সময়ের জন্য হওয়ার কথা। কিন্তু ফেরি পরিচালনার টেন্ডারে সময় দেয়া হয়েছে ৩ বছর। এই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে সাতবার ইজারার টেন্ডার আহ্বান করেও ঠিাকাদার খুঁজে পায়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কবে ইজারাদার চূড়ান্ত করা যাবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনে দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেতু কালুরঘাট সেতু। কর্ণফুলী নদীর উপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই সেতুর মেয়াদ পেরিয়ে গেছে প্রায় ১০০ বছর। জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে ভারি ইঞ্জিনের ট্রেন পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ের মেরামত কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে মেরামত কাজ। সেতু সংস্কারের অংশ হিসাবে গেল ১ আগস্ট থেকে এই সেতু দিয়ে বন্ধ রয়েছে যানবাহন ও রেল চলাচল। ৩ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে সেতু খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় যানবাহন পারাপারে সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করছে ফেরি। এ ফেরি পরিচালনায় ঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য সাতবার টেন্ডার আহ্বান করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। তবে এখনও মিলেনি ইজারাদার।
জানা গেছে, এই সেতু সংস্কার করতে ৩ মাস সময় লাগবে। কিন্তু সওজ ঘাটটি ৩ বছরের জন্য ইজারা দিচ্ছে। অথচ সেতু চালু হলে ঘাটের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। তাই বিষয়টিকে অনেকেই রহস্য হিসেবে দেখছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে কালুরঘাটের দুই পাড়ের চলাচল সম্পূর্ণ ফেরিনির্ভর হয়ে পড়তে পারে। নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু বন্ধই থাকবে, এই আশঙ্কা তাড়া করছে দুই পাড়ের লোকজনের মধ্যে।
এদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ইজারাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। কেউ বলছেন, সওজ পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে ইজারাদার নিয়োগে গড়িমসি করছে। আবার কারো দাবি টেন্ডার শর্তের দোহাই দিয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ইজারা থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কারো মতে, টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দিতে নানা বাহানা করছে সওজ। সপ্তমবারে এসে শীর্ষ দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে সওজ এমন অভিযোগও উঠেছে। টেন্ডারে অংশ নেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, আমি টেন্ডার শর্ত পুরোপুরি মেনে সর্বশেষ টেন্ডারে অংশ নিই। আমার প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা দর দিয়েছিল। আমার প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অথচ আমাকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এরই মধ্যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
সওজ সূত্র জানিয়েছে, ৩ বছরের জন্য কর্ণফুলী নদীর ফেরিঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এরই মধ্যে সাতবার এ টেন্ডার আহ্বান করা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, গেল ১ আগস্ট থেকে সংস্কারের জন্য কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুটির সংস্কার কাজের জন্য সব ধরনের যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এরপর কাজ শেষ হলে সেতুটি আগের মতো যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এসময় ফেরি চলাচলের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘাট ইজারা দেয়া হবে। তবে টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো শেষ করা যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা ফেরি চলাচল স্থায়ী করা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ৩ মাস ফেরি বন্ধ থাকবে। কিন্তু ফেরি চলাচলের ঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে ৩ বছরের জন্য। আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি, যানবাহন চলাচলের জন্য হয়তো আর কখনো কালুরঘাট সেতু ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
তবে সিরাজুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিমত ভিন্ন। তারমতে, ফেরি সার্ভিস চালু রেখে কালুরঘাট সেতুতে যানবাহন চলাচল চালু করা যায়। সে ক্ষেত্রে কালুরঘাট সেতু খুলে দেয়ার পর শুধু হালকা যানবাহন চলবে। বাসট্রাক লরির মতো ভারি যানবাহন চলবে ফেরি দিয়ে। এতে পুরোনো এই সেতুর উপর চাপ অনেক কমবে। নতুন আরেকটি সেতু না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন ও হালকা যানবাহন অনেকটা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।