উপমহাদেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও গবেষক হযরত খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লার শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, সাহিত্য ও আধ্যাত্মিক ভাবনা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন। পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. এএফএম রুহুল হক, ঢাবির দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তফা আবুলউলায়ী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার আশুতোষ (চেয়ার) অধ্যাপক ড. অমিত দে, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ এবং খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এএফএম এনামুল হক।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর অসাম্প্রদায়িক, মানবিক মূল্যবোধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে দর্শনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই উপমহাদেশে শিক্ষার প্রসার ও সমাজ সংস্কারে তার অসাধারণ অবদান রয়েছে। খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর দর্শন সব মানুষকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। তিনি সমাজের সব ধর্ম ও গোত্রের মানুষকে সমভাবে সেবা প্রদান করেছেন এবং ভালোবেসেছেন। সমাজে যে উগ্র ধারা রয়েছে তাকে দমন করার জন্য খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর সুফিবাদী চিন্তাদর্শন ভূমিকা রাখবে বলে উপাচার্য উল্লেখ করেন। উপাচার্য আরো বলেন, সম্প্রীতিময় সমাজ বিনির্মাণে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর অবদান ও তার জীবনকর্ম মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ, বেকার হোস্টেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি বাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষে নাথান কমিশনের সদস্য ছিলেন। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ভবিষ্যতে অধিকতর গবেষণা হবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভাপতির বক্তব্যে পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের হতে হবে বিনয়ী, অল্পভাষী, সত্যবাদী ও পরোপকারী। রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই ব্যক্তি আমার বন্ধু নয় যে পেটপুরে খেল কিন্তু তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকল। এজন্য শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে সে মানুষ হতে পারে না। অপরকে সাহায্য করা, শ্রদ্ধা ও সম্মান করার মধ্য দিয়েই আল্লাহ্ ও তার রাসুলের ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব। এ সময় খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর সাহিত্যকর্ম, আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি উপাচার্য আহ্বান জানান। সেমিনারে দেশ-বিদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।