রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সদ্য বিদায়ী মাস আগস্টে ৪৪২ যানবাহন দুর্ঘটনায় ৪৩২ জন নিহত হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৮ জন নিহত ও ৭৯৪ আহত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন নিহত হয়েছে। এই সময়ে ১১টি নৌযান দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ৯ জন আহত এবং ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া ২৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৪৬ জন, বাসযাত্রী ১৮, ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-লরি আরোহী ১৭, প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশভ্যান আরোহী ২১, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-লেগুনা) ৫৬, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটমণ্ডমাহিন্দ্র-ডাইসু) ১৩ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৪ জন নিহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৯টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৪৫টি গ্রামীণ সড়কে, ৩৭টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে চারটি সংঘটিত হয়েছে। এসবের মধ্যে ৬৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮২টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৪টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪২টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৭টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৪৭টি। এর মধ্যে বাস ১১৪, ট্রাক ৯৪, কাভার্ডভ্যান ২২, পিকআপ ১৫, ট্রাক্টর ৩, ট্রলি ৭, লরি ৮, হ্যান্ডট্রলি ১, ড্রাম ট্রাক ৫, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৬, চল্লিশ টনের লং ভেহিক্যাল ১, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ১৪, প্রাইভেট কার ১২, অ্যাম্বুলেন্স ৭, পাজেরো ২, পুলিশ ভ্যান ১, মোটরসাইকেল ১৪৯, থ্রি-হুইলার ১০৭, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩২, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২৪ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২২টি। দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৫.৪৮ শতাংশ ও প্রাণহানি ৩৩.৩৩, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১১.১৬ ও প্রাণহানি ১০.৫৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.১৫ ও প্রাণহানি ১৫.০৭, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৮৯ ও প্রাণহানি ১৪.৮১ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৬৯ ও প্রাণহানি ৬.৬১, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৭১ ও প্রাণহানি ৪.২৩, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৮ ও প্রাণহানি ১০.৩১ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৭১ ও প্রাণহানি ৫.০২ শতাংশ ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৪৩টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও মৌলভীবাজার জেলায়। এ পাঁচটি জেলায় সামান্য মাত্রার ৯টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে। সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।