চাঁদপুরে হরিজনদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে দুটি ভবন

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শওকত আলী চাঁদপুর

চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপি সহায়তায় চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের ৮৮ পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ পাচ্ছে দুইটি পাঁচ তলা ভবনে আলাদা আলাদা ফ্ল্যাট। যাদের এই ভবনে স্থানান্তর করা হবে ওই জায়গা খালি সাপেক্ষে ওখানে আরো দুইটি বিল্ডিং করার কাজ হাতে নেয়া হবে জানান, ইউএনডিপির কর্মকর্তা। এই ভবন নির্মাণে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করছে শেখ হাসিনার সরকার। ইউএনডিপি, এলজিইডি ও চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই ভবন দুইটির কাজ সমাপ্ত করতে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। পৌরসভার মেয়র জানালেন, এখন ফ্ল্যাট নির্মাণ হলেও সেখানে হরিজনদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা হিসেবে কমিউনিটি সেন্টার ও শিশুদের জন্য বিনোদনমুখী পার্কসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

সরেজমিন স্বর্ণখোলায় গেলে পুকুর পাড়ে ভবন দুইটির ছাদ পেটানোসহ কয়েক তলার কাজের অগ্রগতি দেখা যায়। আর এতে আনন্দিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন।

চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপি সূত্রে জানা যায়, শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণখোলার হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য পাঁচ তলা বিশিষ্ট দুইটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ভবন নির্মাণে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করছে শেখ হাসিনার সরকার। ইউএনডিপি, এলজিইডি ও চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই ভবন দুইটির কাজ সমাপ্ত করতে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের আকাশ, বিপ্লব, খোকনসহ একাধিক হরিজন বলেন, নতুন ভবন হওয়ায় আমরা খুব খুশি। তবে আমাদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে একটি এক কক্ষের ফ্ল্যাট। তার মধ্যেই রান্নাঘর ও টয়লেট থাকবে। যা অনেকটা ছোট মনে হচ্ছে। তবে ধর্মীয় দিক ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা দিকটি মাথায় রেখে আমাদের জন্য ভবনগুলোতে যদি দুটি কক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেট সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে আমাদের জন্য কিছুটা ভালো হতো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর শহরের ইউএনডিপি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যানেজার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, নারীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে হরিজন সম্প্রদায়ে স্বল্প ব্যয়ে আবাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ভবন দুইটি করা হচ্ছে। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এখানে হরিজনদের ফাঁকা স্থানে দুইটি বিল্ডিংয়ে ৮৮টি ফ্লাটে ৮৮টি পরিবারের মাঝে ফ্লাট হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাদের এই বিল্ডিং দুইটিতে স্থানান্তর করা হবে তাদের বর্তমান জায়গা খালি করা সাপেক্ষে আরো দুইটি বিল্ডিং করার কাজ পরবর্তীতে হাতে নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশন হতে এখানে ইউএনডিপি কর্তৃক অর্থায়ন করা হলেও এই ভবন বর্ধিত কাজসহ প্রায় ১০ কোটি টাকার পুরোটাই সরকার দিচ্ছে। আমরা তাদের বসবাসের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে রুমের সাইজ ১৩ ফিট বাই ১০ ফিট করছি। প্রতিটি ভবনের নিচ তলায় বিয়েশাদীর জন্য কমন স্পেস, দ্বিতীয় তলায় ১২টি পরিবার ও তৃতীয় তলায় ৮টি পরিবার রাখার পরিকল্পনা করছি। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আমরা রিএরেঞ্জ করার সুযোগ থাকলে সেটা অবশ্যই করব। এমনকি তাদের মৃত্যুর পর মরদেহ নামানোর জন্য একটা কমন স্পেসের ব্যবস্থা করব।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য জনবান্ধব নানামুখী উদ্যোগের মধ্যেই চাঁদপুর পৌরসভার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসন প্রকল্প। এটি এলআইইউপিসি প্রজেক্টের মাধ্যমে হলেও অর্থায়ন করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। প্রথম পর্যায়ে ৮৮টি ফ্ল্যাটে সেখানে যারা থাকেন, তাদের ভালো ও উন্নত পরিবেশে স্থানান্তর করতে সক্ষম হবো। সারা দেশের মধ্যে অন্য পৌরসভাগুলোর আগে চাঁদপুর পৌরসভা এই ভবন নির্মাণকাজ সমাপ্ত করবে

আশা করছি। এতে করে পরবর্তীতে আরো কয়েকটি বহুতল ভবন হরিজনদের জন্য আমরা নির্মাণের সুযোগ পাবো। সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সবাইকেই আমরা ফ্ল্যাট দিতে পারব।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে আগস্ট মাসে এ ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প চাঁদপুরে পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এইচই রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ও তার প্রতিনিধিদল। তখন ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছিলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে হরিজনদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি, পড়াশোনা ও আত্মকর্মসংস্থান বিষয়ে সচেতন করতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।