সিরাজগঞ্জে ভদ্রাবতী খাল পুনঃখনন

তত্ত্বাবধানে এলজিইডি * ব্যয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা * সুফল পাচ্ছে এলাকাবাসী

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের শয্য ভান্ডারখ্যাত তাড়াশ উপজেলার ভদ্রাবতী খাল পুনঃখননে ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। এ প্রকল্পের এরই মধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজগঞ্জের তত্ত্বাবধায়নে পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ওই উপজেলার বারুহাস ও তালম ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ ভদ্রাবতী খালে এ দুটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উল্লেখিত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি বিধি মতে চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম থেকে এ প্রকল্প দুটির কাজ ওই দুটি ইউনিয়নের উত্তর ভদ্রাবতী পানি নিষ্কাশন সমবায় সমিতি ও দক্ষিণ ভদ্রাবতী পানি নিষ্কাশন সমবায় সমিতি যৌথ উদ্যোগে শুরু করে। এ সমিতি দুটির নারী পুরুষ মিলে উপকারভোগী সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার ৮১ জন ও প্রকল্প দুটির উপকৃত এলাকা ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি। এরই মধ্যে এ প্রকল্প দুটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ খাল দুইটি চলনবিল অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল এলাকায় হওয়ায় বগুড়ার সিংহভাগ পানি ও সংশ্লিষ্ট খালের পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি এ খাল দুটি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওই বিলের মধ্যবর্তী বেসানি নদিতে পতিত হয়। অতি বৃষ্টিতে আগাম বন্যায় এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এতে কৃষক একের অধিক ফসল/শস্য উৎপাদন করতে পারে না। বর্তমানে খাল দুটির খননকাজ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষনস্থায়ী বাঁধ দিয়ে সম্পূর্ণ পানি নিষ্কাশন করে পুনঃখনন কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে সমবায় আইন দ্বারা গঠিত এবং বাংলাদেশ সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে গঠিত মোট ৪২টি এলসিএস গ্রুপ কর্তৃক খাল পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরাসরি প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্তৃক এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প দুটিতে প্রায় ৩ হাজার স্থানীয় সদস্য রয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় দেড় হাজার সদস্য নিয়ে এলসিএস গ্রুপ করা হয়েছে, যারা প্রত্যক্ষভাবে খাল পুনঃখনন কাজের সাথে সরাসরি সংযুক্ত রয়েছেন। এ অঞ্চলে সেচ সুবিধা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, আগাম বন্যার হাত থেকে কৃষকের ফসলি জমি রক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ওই উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় তিন ফসলি জমি পরিণত হয় এক ফসলে। এমন ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ওই খাল পুনঃখননের দাবিতে এলাকার কৃষকরা দাবি করে আসছিল। এ দূরবস্থা নিরসনে এলজিইডি উল্লেখিত প্রকল্পের আওতায় খাল দুটি পুনঃখনন শুরু করায় সরাসরি উপকৃত হবে এ এলাকার কয়েক হাজার কৃষক। আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর আবাদি জমি এবং উৎপাদিত হবে দুই থেকে তিন ফসল শয্য। এতে করে প্রায় ২ হাজার ৪৫০ মে. টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে। এজন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলজিইডি, ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ হ্রাস করে ভূ-উপরিস্থ পানি সেচের আওতায় এনে উল্লেখিত টাকা ব্যয়ে ওই দুটি ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ থেকে রানীরহাট ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২৭.৫০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, এ দুটি পুনঃখননে খালে এরই মধ্যে পানি প্রবাহ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের কৃষকের প্রত্যাশাও পূরণ হবে। জনস্বার্থে সরকারের এমন উন্নয়নে স্থানীয় কৃষকরা এখন খুশি এবং এতে সুফল পেতেও শুরু করছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার জনস্বার্থে ওই খাল দুটি পুনঃখননের জন্য উল্লেখিত টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সরকারি বিধিমতে এ খাল দুটি পুনঃখননের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ কাজ শুরু থেকেই কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবু সালেহ মো. হানিফ সম্প্রতি প্রকল্প দুটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি প্রকল্প কাজের সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট এলজিইডি বিভাগকে দিকনির্দেশনা দেন। এ দিকনির্দেশনায় ওই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানানো হয়েছে।