সুসংবাদ প্রতিদিন

চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষে সফল রাকিব

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বাড়ির আঙিনায় পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা ইয়াছিন আলী রাকিব। ৩৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এখন প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে পুঁজি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ টাকা। রাকিব দিনাজপুর সদর উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রঙিন মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় বেসরকারি চাকরি ছেড়ে এখন নিজের তৈরি প্রতিষ্ঠান ইয়াছিন অ্যাকোয়া ফার্মে সময় দিচ্ছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন ইয়াছিন। এভাবে তিনি স্নাতক শেষ করেন। এরপর ইন্টারনেটে রঙিন মাছ চাষ দেখে তার ভালো লাগে। প্রথমে চারটি রঙিন মাছ কিনে পরিত্যক্ত একটি মাটির হাঁড়িতে শুরু করেন চাষ। পরে তিনি দেখলেন সেখান থেকে আটটি পোনা পাওয়া গেছে। এরপর তা বাড়তে থাকে। পরে তিনি সেই মাছগুলো সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরি রিংয়ের মধ্যে ছেড়ে দেন। এভাবে একপর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন রাকিব। কিন্তু অ্যাকুরিয়াম কেনা বা পাকা চৌবাচ্চা তৈরিতে অনেক খরচ, যা তার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই বুদ্ধি খাঁটিয়ে বাড়ির আঙিনায় পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন চৌবাচ্চা। সেইসঙ্গে রিং দিয়ে তৈরি হাউজ ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বালতি এবং তেলের বোতলেও শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। আর এতেই দেখা মেলে সফলতার। এখন তার বাড়ির আঙিনায় সাতটি প্লাস্টিকের তৈরি চৌবাচ্চা, বেশ কয়েকটি রিং, প্লাস্টিকের বালতি ও হাঁড়িতে রয়েছে ১৫ প্রজাতির রঙিন মাছ। এই মাছ বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়েও এখন তার পুঁজি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ টাকায়। রাকিবের চাষ করা মাছের মধ্যে গাপ্পি, মারবেল মলি, হোয়াইট মলি, ব্ল্যাক মলি, প্লাটি, সোর্ড টেইল, ফাইটার, কৈ, কার্প, জেব্রা, কমেট, সরটেইল, গোল্ড ফিশ, ব্ল্যাকমর, চিকলেট, টেট্রা অন্যতম। ইয়াছিন আলী রাকিব বলেন, তিনি ২০২০ সালে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। শহরের একটি দোকান থেকে ৩০০ টাকায় চারটি গাপ্পি মাছ ও ৫০ টাকার খাবার কেনেন। বাড়িতে ছোট একটি চাড়িতে পানি দিয়ে চাষ শুরু করেন। এরপর মাছগুলো যখন পোনা দিতে শুরু করে তখন সিদ্ধান্ত নেন এই রঙিন মাছের চাষ আরও বাড়াবেন। তিনি বলেন, এখন তার ৯ শতাংশ জমিতে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে সাতটি চৌবাচ্চা এবং বেশ কয়েকটি রিং, প্লাস্টিকের বালতি ও হাড়িতে মাছ আছে। এই চৌবাচ্চাগুলো পাকা তৈরি করতে গেলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হতো। অথচ তার সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই চৌবাচ্চাগুলো যেন ভরে না যায়, সেজন্য নিচে বিশেষ ব্যবস্থায় প্লাস্টিকের পাইপ লাগানো আছে। ট্যাংকের পানি যেমন ওভার ফ্লো হলে বেরিয়ে যায়, তেমনি তার এই চৌবাচ্চাগুলো থেকেও পানি বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওপরে রয়েছে নেট। যাতে করে গাছের পাতা বা ময়লা আবর্জনা না পড়ে। রাকিব বলেন, বর্তমানে এখান থেকে মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন। চার বছরে আয়ের পাশাপাশি পুঁজি বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ টাকা। আগামীতে আরো বড় পরিসরে রঙিন মাছ চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, সাতজন ছাত্র তার কাছ থেকে মাছ নিয়ে চাষ করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে। যার মধ্যে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও আছে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে কিছু করলে সেখানে সফল হওয়া সম্ভব। মাছ নেওয়ার জন্য তাকে অগ্রিম টাকা দিতে হয়। সারাদেশে তার মাছ বিক্রি হচ্ছে। দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, রঙিন মাছের চাষ অনেকটা শখের বশেই অনেকে করে থাকেন। তবে এটাকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে আয় করা খুবই প্রশংসনীয়। সহযোগিতা চাইলে তারা রঙিন মাছ চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।