মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া প্রায় একই সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। গতকাল সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য জানায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেশটির বহু গ্রাম। সর্বত্র কান্নার আওয়াজ। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু পরে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ লোকজন দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা। যেখানে পৌঁছানো খুব কঠিন। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মরক্কোর জনপ্রিয় পর্যটন শহর মারাকেশ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর মরক্কোয় হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। চলছে উদ্ধার অভিযান। তবে আফটারশকের কারণে সেখানে মানুষের আতঙ্ক কমছে না। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে ফিরতেও ভয় পাচ্ছে অনেকে। কিছু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় পুলিশ বাসিন্দাদের ঘরে ফিরতে নিষেধ করেছে। আফটারশকের কারণে এখনো অনেকেই আতঙ্কিত। বাইরে থাকতেই স্বস্তিবোধ করছেন তারা। অন্যদিকে, অনেকেই সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর আরো বেশ কয়েকবার মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ৫ মাত্রার। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বাড়ছে লাশের মিছিল।
ছয় দশকের বেশি সময়ের মধ্যে মরক্কোয় আঘাত হেনেছে সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প। এই দুর্যোগে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা খাদ্য ও পানির জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন। কেউ কেউ তাদের হারানো স্বজনদের খুঁজছেন। ভূমিকম্পের পর অনেকেই খোলা জায়গায় রাত কাটাচ্ছেন। ত্রাণ কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর জন্য লড়াই করেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের গ্লোবাল ডিরেক্টর অব অপারেশনস ক্যারোলিন হল্ট বলেছেন, ‘জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে দুর্যোগ পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে মরক্কো এবং রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ গত রোববার সারা দেশের মসজিদে নিহতদের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মারাকেশের প্রায় ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মরোক্কানদের প্রিয় একটি শহর। বিদেশি পর্যটকদের জন্য শহরটির মধ্যযুগীয় মসজিদ, প্রাসাদ এবং অন্যান্য স্থাপনা আকর্ষণীয়।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, ১৯৬০ সালের পর থেকে এটি মরক্কোর সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প। ১৯৬০ সালের ভূমিকম্পে আনুমানিক কমপক্ষে ১২ হাজার লোক প্রাণ হারায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা ৯ অক্টোবর থেকে মারাকেশে অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার পরিকল্পিত বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আইএমএফের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই সময়ে আমাদের একমাত্র ফোকাস মরক্কোর জনগণ এবং কর্তৃপক্ষের দিকে যারা এই ট্র্যাজেডি মোকাবিলা করছে।’
মরক্কোয় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খুলে দেওয়া হলো রোনালদোর হোটেল
মরক্কোর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এগিয়ে এসেছে পর্তুগাল সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বিপর্যস্ত মানুষদের আশ্রয়ে মরক্কোতে অবস্থিত নিজের হোটেল খুলে দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে মরক্কোর মারাক্কেশ শহর ও এর আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। এই ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজারের বেশি মানুষ। আহত ব্যক্তির সংখ্যাও অনেক। রোনালদোর হোটেল খুলে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একাধিক ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিলাসবহুল এই হোটেলটি এখন মরক্কোর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আল নাসরের তারকার হোটেলটির নাম পেস্তানা সিআর সেভেন মারাক্কেশ। রোনালদোর হোটেলটি অবস্থিত মারাক্কেশ শহরের এম অ্যাভিনিউ এলাকায়। হোটেলটিতে ১৭৪টি কক্ষ রয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।