নীলফামারীর ডোমারের হরিণচড়া ইউনিয়নের কঞ্চনা বিলে এক ধরনের বিশেষ মাটি রয়েছে। সেই মাটি শুকালে আগুনে জ্বলে আবার পানিতেও ভাসে। এর রয়েছে আরো গুণ। বিলের পাশের অনেক পরিবার এই মাটি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। কেউ কেউ মশা তাড়ানোর কাজসহ জমিতে সার হিসেবেও ব্যবহার করে। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ‘অবাক মাটি’। নীলফামারী জেলা প্রশাসনের মতে, এই বিলের মাটি বিশেষ প্রকৃতির। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। সরেজমিন কঞ্চনা বিল এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা জহির উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে বিলের নিচ থেকে এই মাটি পানিতে ভেসে ওঠে। মাছ চাষের সুবিধার্থে তখন এলাকাবাসী ওই মাটি সরিয়ে নেয়। শেওটগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ খাইরুল আলম বলেন, ‘বিলের পানিতে ভেসে ওঠা শুকনা মাটিগুলো বাড়িতে নিয়ে গরুর ঘরে জ্বালিয়ে রাখলে মশা থাকে না। এই মাটি দিয়ে ভাতও রান্না করা যায়। একসময় এখানে প্রচুর পরিমাণে খিলকদমের গাছ ছিল, বন্যপ্রাণী বাস করত, পাখি আসত, প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। এখন আর সেসব নেই।’
বিলের পাশের গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা বেগম বলেন, ‘চৈত্র মাসে বিলের মাটি বস্তায় করে বাড়িতে এনে রাখি। ওগুলো দিয়ে চুলা জ্বালাই। এই মাটি দিয়ে চুলা ভালো জ্বলে। তা ছাড়া মশা তাড়ানোর জন্য জ্বালাই।’ এদিকে সরকারি ভূমি রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, জমি সংকোচনের পরও ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত এখানে ৮৪ বিঘা জলাভূমি ছিল। ১৯৯০ সালে উঁচু জমি স্থানীয়দের লিজ দেওয়ার পর এর আয়তন দাঁড়ায় ৬৯ বিঘায়। এছাড়া লিজ নেওয়া অংশে মাটি ফেলে কৃষি জমিতে রূপান্তর করে এই মাটির বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) পঙ্কজ ঘোষ বলেন, অফিশিয়ালি এটি একটি বিল। শুকনো মৌসুমে এর একটি অংশে চাষাবাদ করা হয়। তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের কাজ হবে এটির গবেষণার ব্যবস্থা করা। এখানে মৃত্তিকা বিষয়ে বিজ্ঞ কোনো ব্যক্তিকে যুক্ত করতে পারলে তিনি হয়তো এ বিষয়ে গবেষণা করে আমাদের পরামর্শ দিতে পারবেন।’