শেখ রেহানার জন্মদিন পালিত

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কেক কাটা, আলোচনা সভা ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার ৬৯তম জন্মদিন গতকাল পালিত হয়েছে। তিনি ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য নির্মমভাবে হত্যা করে। সে সময় শেখ রেহানা তার বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন বলে প্রাণে রক্ষা পান।

শেখ রেহানার স্বামী অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টির এমপি এবং কনিষ্ঠ মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনভিত্তিক কন্ট্রোল রিস্কসের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস এডিটর হিসেবে কাজ করছেন।

জন্মদিন উপলক্ষ্যে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ এবং অনুসারী শেখ রেহানাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন কামনা করেছেন। এছাড়াও গোপালগঞ্জ শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রথমে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং গীতা পাঠ করে শেখ রেহানার ৬৯তম শুভ জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর গোপালগঞ্জ শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নয়ন চন্দ্র ঘোষ। কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শেখ রেহানা সম্পর্কে আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মোনাজাত। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। প্রার্থনা করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার সুস্বাস্থ্য, সাফল্য, দীর্ঘায়ু ও দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির জন্য।

আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে কাটা হয় জন্মদিনের কেক। পরে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মিষ্টি ও কেক দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহের ছোট বোন শেখ রেহানার ৬৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জ শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।

শেখ রেহানা ১৯৭৯ সালে তার ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য প্রথম বিশ্বব্যাপী আহ্বান জানানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সুইডেনের স্টকহোমে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে নিহত জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম বিচারের আন্তর্জাতিক আহ্বান উত্থাপন করেন। তিনি স্টকহোমে ১৯৭৯ সালের ১০ মে ইউরোপীয় দেশসমূহের প্রধান, জাতিসংঘ প্রধান এবং আন্তর্জাতিক এনজিওর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে একটি সর্ব-ইউরোপীয় বাকশাল সম্মেলনে বক্তৃতার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সে সময় শেখ হাসিনা দিল্লিতে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সামরিক সমর্থিত বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য আওয়াজ তুলতে ইউরোপে থাকা তার ছোট বোনকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। সেই আবেগঘন ভাষণের মধ্য দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য তার কণ্ঠস্বর উত্থাপিত হওয়ায়- সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।

এদিকে শেখ রেহানার জন্মদিন উপলক্ষ্যে গতকাল এক বিবৃতির মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিবৃতিতে তিনি বলেন, শেখ রেহানা মনে-প্রাণে একজন বাঙালি এবং বাঙালির প্রয়োজনে উদারনৈতিক মানবিক মনোভাবাপন্ন নির্মোহ এক ব্যক্তিত্ব। তিনি অসাধারণ গুণাবলীতে সমৃদ্ধ এক মানবিক হৃদয়ের অধিকারী। বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বাঙালির প্রতি তার অসীম মমতা, দরদ ও ভালোবাসা। চিন্তা-চেতনা, মন-মননে তিনি একজন আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। সততার অনুকরণীয় আদর্শ শেখ রেহানা একজন রত্নগর্ভা মা। নিজের তিন সন্তানকে তিনি বিশ্বের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। যারা আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ও প্রতিষ্ঠিত। পিতা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর সীমাহীন দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন এবং ধৈর্য্যরে সঙ্গে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন। লন্ডনের মতো শহরে এখনো গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। পরিবারের সদস্যদের হারানোর দুঃখ-বেদনাকে একান্ত নিজের করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শকে ধারণ করে পথ চলেছেন অবিরাম ধারায়। বড় বোন শেখ হাসিনার মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেন পিতা মুজিবের সোনার বাংলার- উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের। যার হৃদয়ের ক্যানভাসে নিরন্তন ধারায় প্রবাহিত হয় বাংলা ও বাঙালির মঙ্গল-চিন্তা। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ কামনায় নিশঙ্কচিত্তে তিনি সর্বদা আপসহীন। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সত্ত্বেও একজন নিরহংকারী সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপনের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। ধৈর্য্য, সততা, সাহস, দৃঢ়তা, অধ্যবসায়, নিষ্ঠা, উদারতা ও সংযমের অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত এক মানবিক চরিত্রের নাম শেখ রেহানা। জন্মদিনে তাকে আবারো শুভেচ্ছাসিক্ত অভিনন্দন।