সুসংবাদ প্রতিদিন
দেশি মুরগি পালনে স্বাবলম্বী ২৩০৫ পরিবার
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের উখিয়ায় দেশীয় মুরগি পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্যতা বিমোচনের লক্ষ্যে অসহায় ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে মুরগি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার। ৯৫০ পরিবারের মধ্যে ১৩,৩০০টি মুরগি বিতরণ করবে এনজিও মুক্তি কক্সবাজার। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর অর্থায়নে মুক্তি কক্সবাজারের ইম্প্রুভিং পিচফুল কো-এক্সিসটেন্স অ্যান্ড সেলফ-রিলায়েন্স অপরচ্যুনিটিজ ফর রিফিউজি অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটি প্রজেক্টের আওতায় উক্ত মুরগিগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়া উপজেলার রাজা পালং ইউনিয়নের পূর্ব দিঘলিয়া গ্রামে মুরগি বিতরণ কার্যক্রম প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমদ। এনজিও মুক্তির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. ওসমান গনির সভাপতিত্বে ও প্রজেক্ট অফিসার আবিদা সুলতানা লিজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ চন্দ্র রায়, উখিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মীর সায়েদুল ইসলাম (রোমান চৌধুরী), উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, মুক্তি কক্সবাজারের প্রজেক্ট অফিসার আলতাফ হোসেন, টেকনিক্যাল অফিসার মো. আজহারুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা দিলীপ সরকার ও কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর দীপা রানী সিংহা। এনজিও সংস্থা মুক্তি কক্সবাজারের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. ওসমান গনি জানান, ইউএনএইচসিআরের অর্থায়নে আইপিসিওএসও কর্মসূচির আওতায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত অতি দরিদ্র বাংলাদেশি পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে এ প্রোগ্রাম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ৯৫০ পরিবারকে উপকারভোগী হিসাবে নির্বাচিত করে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও দেশীয় মুরগি বিতরণ শুরু করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে রাজাপালং ইউনিয়নের ৬৫৬ পরিবার ও পালংখালী ইউনিয়নের ২৯৪ পরিবার। প্রতিটি পরিবারকে ১২টি মুরগি ও ২টি মোরগ দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, বিগত বছরও রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের আলাদা ১৩৫৬ পরিবারকে উপকারভোগী হিসাবে নির্বাচিত করে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও দেশীয় মুরগি বিতরণ করা হয়ে ছিল। ওই সময় ১৩৫৬ পরিবারকে ১১০৮০টি মুরগি ও ২৭৭০টি মোরগ দেয়ার পাশাপাশি দোতলাবিশিষ্ট মুরগি পালনের ঘর, মুরগির খাবারের পাত্র ও ২০ কেজি মুরগির খাবার বিতরণ করা হয়েছিল। উক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বর্তমানে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় তাদের ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া শিখানো সম্ভব হচ্ছে। স্বাবলম্বী হয়ে পুরো পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় তাদের পরিবারে হাসি ফুটেছে এবং এরা দেখছে এখন সুখের আলো। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজারের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে দেশীয় মুরগি পালন করে এই পরিবারগুলো স্বাবলম্বী হওয়ার এ সফলতা অর্জন করেছে। মুক্তি কক্সবাজারের প্রজেক্ট অফিসার আবিদা সুলতানা লিজা জানান, বিগত ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলমান এ কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করতে দেশীয় মুরগি পালনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও উদ্যোক্তাদের খামারের মুরগি বিক্রি করতে মার্কেট লিংকেইজ করা হয়। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মতে, দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মুক্তি কক্সবাজার এনজিও সংস্থার এ ধরনের কর্মসূচি উখিয়া উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের মৃত নুর আহমদের স্ত্রী সাজেদা বেগম স্বামীর অকাল মৃত্যু হলে ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার এর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ ও উক্ত সংস্থার দেয়া দেশীয় মুরগি পালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। বর্তমানে তার রয়েছে ৫০টির মতো মোরগ-মুরগি। বাজারে বিক্রি করে আয়কৃত অর্থ দিয়ে সবজি ও ধান চাষ করে অভাব অনটন দূর হয়েছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসায়, তার ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া শিখানো সম্ভব হয়েছে। একই এলাকার মৃত আব্দুল হালিমের স্ত্রী জারিয়া খাতুন বলেন, দেশীয় মুরগি পালন করে আর্থিক স্বাবলম্বী হয়ে গবাদি পশু পালন শুরু করেছি। তার প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম ও সাবেকুন্নাহারসহ আরো অনেকে জানান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে দেশীয় মুরগি পালন করে দারিদ্র্য বিমোচনে তারা সফলতা পেয়েছে। তাদের পরিবারে হাসি ফুটেছে ও সুখের আলো দেখছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে। তারা আরো জানান, মুরগি পালনে সফল হওয়ায় তাদের পরিবারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, বাড়ির আসবাবপত্র সংগ্রহ ও ছাগল-গরু ক্রয় করেছে। এমনকি ধান চাষ ও সবজি খেত করার জন্য জমি লিজ নিয়েছে এসব পরিবার।