সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব প্রজাতির মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গরু ও খাসির মাংস আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারগুলোতে সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। ২০ টাকা বেড়ে সোনালি ৩৪০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ৫০-১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি বিক্রেতারা বলছেন, আমাদের দাম বাড়ানোর কিছু নেই। আমরা প্রতিদিন পাইকারি বাজার থেকে মুরগি কিনে এনে বিক্রি করি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করি, কমলে কমিয়ে দেই। গত সপ্তাহে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম ছিল। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন। ক্রেতাদের জিম্মি করে তারা ব্যবসা করছেন। কারণ ছাড়াই নানা অজুহাতে বিক্রেতারা পণ্যে দাম বাড়িয়ে দেন। খুচরা বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। বিক্রেতারা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের এক ধরনের জিম্মি করে ফেলেছেন। বাজারে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এমনটি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, ট্যাংরা ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারে সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ছোট বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলার কেজি ৪০ টাকা, শিম ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বেপরোয়া আলু, পেঁয়াজ, ডিমের বাজার। সরকারের নির্ধারিত দামের প্রতিফলন নেই বাজারে। বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ধরন ভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর প্রতিটি ডিম ১২ থেকে এলাকা ভেদে ১৩ টাকা; প্রতি হালি ডিম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মতো আলু, পেঁয়াজ ও ডিম বিক্রি করছেন।
গত বৃহস্পতিবার সরকার আলু-পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেয়। প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। একইসঙ্গে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ওই নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল সকালে ঢাকা থেকে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ বাসভবনে সাংবাদিকদের জানান বেঁধে দেওয়া পেঁয়াজ, আলু, ডিমসহ তিনটি কৃষি পণ্যের দাম শক্তভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট পরিমাণ লোকের অভাব রয়েছে। এরপরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের বিশাল বাজার। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সব সময় ব্যবসায়ীদের যে চাপে রাখা যায়, তা কিন্তু নয়। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে ১ কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার দিচ্ছি।