ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যা

নিহত বেড়ে ১১ হাজার ৩০০ নিখোঁজ ১০ হাজার

নিহত বেড়ে ১১ হাজার ৩০০ নিখোঁজ ১০ হাজার

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার দেরনা শহরে ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১১ হাজার ৩০০ জন। এছাড়া বন্যার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন আরো ১০ হাজারের বেশি মানুষ। নিখোঁজ এসব মানুষের খোঁজে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দেরনায় ভয়াবহ বন্যার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছেছে বলে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে দুটি বাঁধ ভেঙে সুনামির মতো ব্যাপক বন্যার পরে নিখোঁজের অনুসন্ধানেও জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক এ সাহায্য গোষ্ঠীর সেক্রেটারি-জেনারেল মারি এল-ড্রেস জানান, ভূমধ্যসাগরীয় এই শহরে আরো ১০ হাজার ১০০ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। লিবিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের আগে দেরনায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার বলেছিল। এছাড়া ঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে উত্তর আফ্রিকার এই দেশের অন্যত্র প্রায় ১৭০ জন নিহত হয়েছেন।

এর আগে গত রোববার অস্বাভাবিক শক্তিশালী ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্যানিয়েল পূর্ব লিবিয়াজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি করে, তবে ওই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেরনা শহরটি। রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি যখন উপকূলে আঘাত হানে, তখন বাসিন্দারা শহরের বাইরের দুটি বাঁধ ভেঙে পড়ার বিকট বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পেয়েছিলেন। আর এরপরই বন্যার পানি সুনামির মতো শহরে প্রবেশ করে এবং বহু ভবন বিধ্বস্ত করাসহ হাজার হাজার মানুষকে সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেরনায় যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই এড়ানো যেত। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের প্রধান পেটেরি তালাস জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি স্বাভাবিক কোনো অপারেটিং আবহাওয়া পরিষেবা থাকত, তাহলে তারা সতর্কতা জারি করতে পারত। আর সেটি হলে জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হতো।’ পূর্ব লিবিয়ার কর্মকর্তারা আসন্ন ঝড় সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করেছিলেন এবং গত শনিবার তারা সমুদ্র থেকে ঢেউয়ের আশঙ্কায় বাসিন্দাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সতর্কতা ছিল না। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং আরো ১০ হাজার ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে।

বন্যায় বিপর্যস্ত দেরনার মেয়র আব্দুল মেনাম আল-ঘাইতি বলেছেন, সুনামি সদৃশ এ বন্যায় যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটির ওপর ভিত্তি করে তারা ধারণা করছেন, মৃতের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ হাজার হতে পারে। সাগরের পানিতে ভেসে আসছে একের পর এক মরদেহ। কাঁদামাটির ভেতর থেকে একের পর এক মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন বিদেশি রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই সুদান এবং মিসরের নাগরিক বলে জানিয়েছেন লিবিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। লিবিয়ার এই বন্যায় মারা গেছেন ছয় বাংলাদেশিও। এ ঘটনায় নিখোঁজদের মধ্যেও কিছু বাংলাদেশি থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দারনার মেয়র আবদুল মেনাম আল-গাইথির আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ২০ হাজারে পৌঁছাতে পরে। কারণ বন্যায় শহরটির একটি অংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ের দারনা শহরটিতে প্রায় এক লাখ মানুষ বসবাস করত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বাঁধ ধসে গেলে অনেকটা সুনামির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এতে ভয়ংকর পানির স্রোত এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় চলার পথের সব কিছু।

কর্মকর্তাদের ধারণা, বন্যায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতির জন্য স্থানীয়দের অনেকেই অবকাঠামোর দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। দেশটির সতর্কতা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে জাতিসংঘও। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রধান বলেছেন, বাসিন্দাদের সতর্ক করা গেলে এবং পালানোর সময় দেওয়া হলে বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনা এড়ানো যেত।

লিবিয়ার বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে ৪০০ বিদেশি

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দারনা শহরে ঘূর্ণিঝড়ের পর আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উদ্ধার তৎপরতা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সারি। ফলে শেষ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন শহরটির মেয়র। লিবীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ের শহরটিতে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪০ মরদেহ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ১৯০ জনকে এরই মধ্যে সমাহিত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জন বিদেশিও রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই সুদান এবং মিসরের নাগরিক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত