ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

তালের ব্যবসায় সফল হবিগঞ্জের সজিব

তালের ব্যবসায় সফল হবিগঞ্জের সজিব

হবিগঞ্জের সুলতানশী গ্রামের সজিব মিয়া নামে এক কৃষক ৩০ বছর ধরে তাল উৎপাদন ও তাল নিয়ে ব্যবসা করে করেছেন নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন। বাড়িতে করেছেন বিল্ডিং। হয়েছেন বাজারের দোকানের মালিক। ভাদ্র মাসের গরমে, তাল পাকে চরমে। আর এ গরমে এক মাসে সজিব মিয়ার হাতে আসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন তালমন, মালপোয়া, পাঠিসাপটাসহ তালের পিটার জন্য তালের অনেক কদর। আর এ তালের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করেন সজিব মিয়া। শুধু হবিগঞ্জ জেলা শহরই নয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা, এমনকি জেলার বাহিরের পাইকাররা আসে তার কাছে তাল ক্রয়ের জন্য। সজিব মিয়া জানান, তার দাদা বাড়িতে ছয়টি তালগাছ লাগান। ৩০ বছর আগে তিনি যখন বিয়ে করেন, তখন এ গাছগুলোতে ফল আসতে থাকে। গাছে উঠে তাল পেড়ে সেগুলো নিয়ে বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যায়। তখন থেকেই মাথায় চিন্তা আসে, তালের ব্যবসা করার। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জেলার পাহাড়ি এলাকা চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর, আমরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক তালগাছ আছে। তিনি ভাদ্র মাস আসার আগেই ওই সব এলাকা থেকে চুক্তিতে গাছ ক্রয় করেন। পরে তাল পেড়ে বাজারে বাজারে বিক্রি করেন। পাইকাররা তার বাড়িতে এসে তাল নিয়ে যান। আবার পাইকারি বাজারে প্রতিদিন বিক্রি করেন পাকা তাল। সজিব মিয়া জানান, প্রতি বছর ১০০ থেকে ২০০ তালগাছের ফল ক্রয় করেন। ফলন অনুযায়ী ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় ক্রয় করেন একেকটি গাছের ফল। পরে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার তার বিক্রি হয় একেকটি গাছ থেকে। কোনো গাছে দুই থেকে ৩ তাল পাওয়া যায়। তালের সাইজ অনুযায়ী ২০ থেকে ৯০ টাকা পিস বিক্রি হয়। আবার পাইকাররা ৩০ থেকে ১২০ টাকা পিস বিক্রি করেন এ তাল। হবিগঞ্জ শহরের চাষি বাজারে ভাদ্র মাস শুরুর আগে থেকেই একদিন পর পর তিনি ২০০ থেকে ৩০০ তাল নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য। পাইকাররা এখান থেকে তাল কিনে নিয়ে যান। শহরের অন্যান্য বাজারেও তিনি তাল বিক্রি করেন। জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা তার বাড়ি থেকে এসেও তাল কিনে নিয়ে যান। ৪০ দিনের মাঝেই শেষ হয় তালের ব্যবসা। এ সময়ে মুনাফা আসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। কোনো বছরই লোকসান হয় না। তবে মাঝেমধ্যে কিছু তাল পচে যায়। সেই পচে যাওয়া তালের বীজ বিক্রি করেও পাওয়া যায় অনেক টাকা। পচা তাল ও বিক্রিত তালের বীজ তিনি সরকারী বিভিন্ন অফিস ও সংস্থায় বিক্রি করেন ১০ টাকা পিস হিসেবে। প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ হাজার বীজ বিক্রি করে আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। সজিব মিয়া জানান, এখন তার বয়স ৫৩ বছর। ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে বড় হয়েছে। তারা সকলেই লেখাপড়া করেছে। এক ছেলে আশা’য় চাকরি করেন। আরেক ছেলে পড়ালেখা করছেন। একজন কৃষিকাজে জড়িত। তার তিন ছেলেই ভালো ফুটবলার। শুরুতে তিনি নিজেই গাছে উঠলেও এখন শ্রমিক দিয়ে তাল পাড়ান। তাল পাড়তে একজন শ্রমিককে গাছপ্রতি ২০০ টাকা দিতে হয়। এ মজুরি এবং গাড়ির ভাড়া ছাড়া আর তেমন কোনো খরচ নেই। তাল দিয়ে ব্যবসা শুরু হলেও এখন তিনি তেঁতুল, বেল, আম, কাঁঠাল, জাম্বুরা, টক বরইও বিক্রি করেন। তালের মতো করেই কিনে নেন এসব ফলের গাছ। পরে পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন। সবাই তাকে এক নামে চিনে। মোবাইলে যোগাযোগ করেনই সবাই ফল কিনে তার কাছ থেকে। দেশি ফল বিক্রি করে তিনি লাভবান। পরিবারের সদস্যরাও ফরমালিনমুক্ত টাটকা ফল খেতে পারায় সবাই সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী। নিজের বাড়ির ছয়টি তালগাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং দুটি জাম্বুরা গাছ থেকে আসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বাড়ির অন্যান্য ফল থেকেও ভালোই আয় হয় তার। তালগাছ নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাশা সজিব মিয়ার। একবার লাগানোর পর কোনো যত্ন ছাড়াই বছরের পর বছর ফলন পাওয়া যায়। বজ্রপাত প্রতিরোধে এ গাছের ভূমিকা আছে। গাছের পাতা থেকে হাতপাখা ও চাটাই তৈরি করা যায়। পাকা তাল ছাড়াও কাঁচা তালের শ্বাস খুবই জনপ্রিয়। তাল গাছের রস থেকে গুড়ও সংগ্রহ করা যায়। তবে শ্বাসের জন্য কাঁচা তাল বিক্রিতে আয় কম বলে জানান সজিব মিয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত