উদ্বোধনী দিনে সংগ্রহ ১ কোটি ১১ লাখ টাকা
‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফান্ড’ চালু করল ঢাবি
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাবি প্রতিনিধি
গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফান্ড’ চালু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ ফান্ডের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তির দেয়া মোট টাকা ১ কোটি ১১ লাখ টাকার চেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের হাতে প্রদানের মধ্যদিয়ে এ ফান্ডের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান হাতে চেক প্রদান করেন। এরপর একে একে পিএইচপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পৃতি চক্রবর্তী ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান চেক প্রদান করেন।
চেক প্রদান শেষে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে পৃতি চক্রবর্তী বলেন, এটা খুব বড় একটি উদ্যোগ। আমি মনে করি উপাচার্য গবেষণা উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, এটি অনেক এগিয়ে যাবে। এজন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং এ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করছি।
সুফি মিজানুর রহমান বলেন, আল্লাহ বলেছেন, যে আল্লাহর পথে ভালো কাজে ১ টাকা দান করবে, আল্লাহ এর বরকতে তাকে অজস্র দান করবেন। আমি ১০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলাম আর আজকে এখানে দান করলাম। আমাদের উচিত সবাইকে একটি টাকা হলেও এখানে দান করা। এতে করে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ভালো হবে। এ সময় তিনি প্রতি বছর এই ফান্ডে দান করার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা পিএইচপি পরিবার প্রতি বছর এখানে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, আমি যখন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব নিই, তখন থেকেই ভিসি মহোদয় আমাকে বলে আসছিলেন গবেষণা নিয়ে কোনো ফান্ড গঠন করা যায় কি না। দাতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন আমরা এই কাজগুলো আরো এগিয়ে নিয়ে যাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো ভালোভাবে রিপ্রেজেন্ট করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের শতবর্ষী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট খুব কম। এক বছরে মাত্র ১৫ কোটি টাকা বাজেট দেয়া হয়। আমরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি কিন্তু তাদের যে বাজেট আমাদের বার্ষিক বাজেটের থেকেও অনেক বেশি। এ সময় তিনি এই ফান্ড চালু রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ভারতবর্ষে দানের ভিত্তিতেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তার বহির্ভূত নয়। এখানেও অনেক মানুষের দান রয়েছে, জমি রয়েছে। দার্শনিকরা পুণ্যকে পর্যন্ত দান করার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে মানুষ সৎ না হয়ে
সচ্ছল হচ্ছে প্রতিদিন, জ্ঞানী বা প্রজ্ঞাবান না হয়ে ধূর্ত হচ্ছে এবং
হৃদয়বান না হয়ে বিশিষ্ট হচ্ছে। এসব কারণে এই দর্শনগুলো ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে।
গবেষণা নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রিসার্চ, সেটা তো আসলে একটা কাজ করেই সফল হয় না। গবেষণা করতে টাকা
লাগবে আবার টাকা হলেও যে ভালো গবেষণা হবে তারও কোনো
গ্যারান্টি নেই। এখন গবেষণার জন্য টাকা চাই আবার টাকা ফিরেও যাচ্ছে আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে। আমাদের ইউনিভার্সিটি হচ্ছে পাঠদান গ্রাজুয়েট তৈরির ইউনিভার্সিটি। এজন্য গবেষণার কাজে আমরা এগিয়ে যেতে পারি না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দাতাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে আজকে অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে এই ফান্ডের কার্যক্রম শুরু হলো। এটি চলমান থাকবে
এবং প্রতি বছরই একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ,
স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান, ধনাঢ্য, দানবীর, শিক্ষা ও গবেষণায় অনুরাগী ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে অনুদানের চেক গ্রহণ করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে আরো সমৃদ্ধ করতে এই ফান্ডের তহবিল আরো বৃদ্ধি করার জন্য দেশে- বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইসহ দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি উপাচার্য আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ উপস্থিতিতে আগামীতে একটি সাড়ম্বর অনুষ্ঠানে অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে এই ফান্ডের মুলধন ১ হাজার কোটিতে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।