পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সীমান্তবর্তী নদী মহানন্দায় পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও স্থানীয় পাথর শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিজিবির উপর আক্রমণ করার অভিযোগে চারজনকে আটক করে বিজিবি। রাতে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় মামলা হয়েছে।
মামলায় আটককৃতরা হলেন- উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাদ্রুবাড়ি এলাকার ট্রাক্টরচালক সোলেমান আলী, একই এলাকার পাথর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, রণচন্ডী এলাকার ট্রাক্টরচালক অমিত হাসান ও পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার ট্রাক্টরচালক শিমুল হাসান।
গতকাল সকালে আটকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। এর আগে গত শনিবার সকালে উপজেলার ভাদ্রুবাড়ি এলাকায় মহানন্দা নদীতে পাথর তুলতে গেলে বাধা দেয় বিজিবি। পরে দুপুরে নদী থেকে পাথর নিয়ে আসার সময় বিজিবি পাথরবোঝাই তিনটি ট্রলি আটক করলে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে রণচন্ডী বাজারের ভাদ্রুবাড়ি এলাকায় টহলরত ছিলেন বিজিবির সদস্যরা। বেলা ১১টার দিকে মহানন্দা নদী থেকে বালু ও পাথরবোঝাই তিনটি ট্রলি আটক করে বিজিবি। এতে বিজিবির সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ঘটে।
খবর পেয়ে তেঁতুলিয়ার ইউএনও ফজলে রাব্বি, উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মীমাংসার জন্য বসেন। এ সময় আবার পঞ্চগড় থেকে দুটি পিকআপে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসলে আরো সংঘর্ষ হয়। বিজিবির লাঠিচার্জে ১২ জন আহত হন। তাদের তেঁতুলিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- ভাদ্রুবাড়ি এলাকার আমিনুর, সবিরন, ইমারন, মালতি, আকলিমা, আতুল, ছালেমা, জোসনা, আঞ্জুনা, সালেকা ও সরকারপাড়া এলাকার রাসেল। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহতদের কয়েকজন বলেন, মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে গেলে বাধা দেয় বিজিবি। দুপুরে কয়েক গাড়ি বিজিবি এসে আমাদের মারধর শুরু করে।
এ ঘটনাটি নিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলা চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বী, তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকীসহ পাথর শ্রমিকরা। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল যুবায়েদ হাসান বলেন, সীমানা অতিক্রম করে একটি চক্র পাথর উত্তোলন করতে গেলে বিজিবি বাধা দেয়। এ সময় তারা আমাদের ৬-৭ জন বিজিবি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এর ফাঁকে সীমান্ত থেকে ট্রাক্টরগুলো সরিয়ে নেয় তারা। পরে আমাদের সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। লাঠিচার্জের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, ৩ আগস্ট জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় বর্ডার ক্রস করে পাথর তোলা যাবে না। মহানন্দা নদীতে পাথর তোলা নিয়ে মাঝেমধ্যে বিজিবি ও পাথর শ্রমিকদের মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। যুগযুগ ধরে তারা এখানে পাথর উত্তোলন করে আসছেন। বাংলাদেশ অংশে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তুলতে বাধা নেই। তবে সীমানা পেরিয়ে মহানন্দায় পাথর তুলতে গেলে বিজিবির সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিজিবি লাঠিচার্জ করতে উদ্ধত হয়েছিল কিন্তু আমরা তাদের থামিয়েছি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিজিবি। বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় রাতে ফৌজদারি আইনে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সকালে চারজনকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।