ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে অসতর্কভাবে রাস্তা পারাপারে বাড়ছে দুর্ঘটনা

বেশিরভাগ যাত্রী মানে না যানবাহন ব্যবহার নীতি
চট্টগ্রামে অসতর্কভাবে রাস্তা পারাপারে বাড়ছে দুর্ঘটনা

চট্টগ্রাম সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। কোনোমতে দুর্ঘটনার সংখ্যায় লাগাম টানতে পারছে না সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। বিভিন্ন গবেষণায় দুর্ঘটনা সম্পর্কে নানা চিত্র উঠে এসেছে। আবার এসব গবেষণায় বিভিন্ন সময় নানা সুপারিশও এসেছে। যাতে বলা হয়েছে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে। সেইসঙ্গে কমবে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। কিন্তু গবেষণার সুপারিশ বন্দি থাকছে লাল ফিতায়। আলোর মুখ দেখেনি কখনো। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুও ঠেকানো যাচ্ছে না।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে অসচেতনভাবে রাস্তা ব্যবহারকারীর কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। ফুটপাত ব্যবহারে অনীহা, তাড়াহুড়া করে রাস্তা পারাপার, মোবাইল ফোন ব্যবহার, ব্যস্ত অবস্থায় রাস্তা পারাপারসহ আরো নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ দায়ী ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী তথা পথচারী, মোটরসাইকেলচ ালক এবং সাইকেল চালক। ২০২১ সালে চসিক এলাকায় ৯৫ জন নিহতের মধ্যে ৮২ শতাংশই ছিলেন পথচারী। আর ১১ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক, ২ শতাংশ সাইকেল আরোহী এবং বাকি ৫ শতাংশ যানবাহন ব্যবহারকারী।

জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের সহযোগী বৈজ্ঞানিক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়ার গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডির ফলাফলেও এ তথ্য জানানো হয়। সম্প্রতি সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) সহায়তায় চসিক এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুর্ঘটনার তথ্য ও কারণগুলো উঠে আসে। অনুষ্ঠানে গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া জানান, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ দায়ী তিনটি শ্রেণি। যাদের গবেষণায় ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হলেন পথচারী, মোটরসাইকেল চালক এবং সাইকেল চালক। গবেষণা মতে শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে যানবাহনগুলো গতিসীমা অতিক্রম করে। আর গতিসীমা অতিক্রম করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ৪৮ শতাংশ হারে দেখা যায় বাসের ক্ষেত্রে। মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ৬৮ শতাংশ এবং আরোহীদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ২০ শতাংশ। গবেষণায় আরো বলা হয়, যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। এছাড়া যাত্রী ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের প্রবণতা নেই বললেই চলে। ভারী যানবাহনের চালকদের ক্ষেত্রে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ৩ শতাংশ। যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশুদের মধ্যে কাউকেই চাইল্ড-সিট তথা চাইল্ড-রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে যাত্রীদের অসচেতনতাকেই দায়ী করা হয়। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটির (বিআইজিআরএস) অংশ হিসেবে জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার সিআইপিআরবি’র সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অংশ হিসেবে চসিক এলাকায় পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে। ২০২২ সালের মে থেকে চসিক আওতাভুক্ত নির্বাচিত এলাকার এরইমধ্যে ২ রাউন্ড তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের পক্ষে ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরেন। গবেষণায় যুক্ত সংশ্লিষ্টদের অভিমত, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সড়ক-সংঘর্ষ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্ঘটনার সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা এসব তথ্য-উপাত্ত যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারবে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চসিকের গৃহীত উদ্যোগসমূহ ও চলমান কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিআইজিআরএসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে চসিক সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃপক্ষের মতে, চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিশ সড়কগুলো নিরাপদ ও সচল রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। তবে, ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে নিরাপদ সড়ক গড়া সম্ভব নয়, পুলিশের পাশাপাশি সব অংশীজনকে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই নিজেদের আগে সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত