ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পদ্মা ও মেঘনায় ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ

জেলেপাড়ায় আনন্দের বন্যা
পদ্মা ও মেঘনায় ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ

পদ্মা-মেঘনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনায় রূপালী ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা এতদিন হতাশায় দিন কাটালেও তারা এখন অনেক খুশি ও আনন্দিত। জেলে পরিবারের সদস্যরা এখন অনেক খুশি। তবে তারা বলছেন, আগামী মাসে প্রথম দিকে মা ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই তারা বেশি দিন সময় পাবে না ইলিশ ধরার জন্য। শহরের বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দক্ষিণাঞ্চলের আমদানি করা ইলিশ বিক্রি হলে স্থানীয় আড়তগুলোতে বিক্রি হয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ। এসব ইলিশ জেলেরা সরাসরি নদী উপকূলীয় ছোট আড়তগুলোতে এনে বিক্রি করেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাটে ইলশের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই টন (৫০ মণ) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব ইলিশের খুচরা ক্রেতাই বেশি। গত সোমবার দুপুরের পর হরিণা ফেরিঘাটের মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগই খুচরা ক্রেতা। এছাড়া অল্প কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ ক্রয় করে শহরের বাজারগুলোতে এবং পরিচিতি আত্মীয়-স্বজনের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

জেলেরা জানান, এক সপ্তাহ আগে পদ্মা-মেঘনায় তেমন ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যারা বড় নৌকা নিয়ে ইলিশ ধরতে সাগর এলাকায় যান তারা পরিমাণে বেশি পান। ওইসব নৌকায় জেলে থাকে ১০-১৫ জন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার নয়ার হাট থেকে এই আড়তে ইলিশ ক্রয় করতে আসা তসলিম হোসেন বলেন, এখানে আসলে জেলেদের ধরে আনা তাজা ইলিশ ক্রয় করা যায়। দাম বেশি হলেও ভেজাল নেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ আজকে ক্রয় করেছি ১৭০০ টাকা করে। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয় ৫৫০-৭০০ টাকা। সাইজ অনুসারি প্রতি হালি ইলিশের দাম উঠে। হরিণা আড়তের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ছৈয়াল জানান, ইলিশ মৌসুমে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার দুই পাড়ে কমপক্ষে ২০০ ছোট বড় আড়তে ইলিশ বিক্রি হয়। এখন ইলিশ কম-বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে নদীতে পানি কমে যাচ্ছে। এরপর আগাম মাসের শুরুর দিকে শুরু হবে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান। তখন জেলের অবসর হয়ে পড়বে। যদি ভাগ্য ভালো হয় আরো ২০-২৫ দিন জেলেরা ইলিশ ধরতে পারবে। অপর আড়তদার মোক্তার হোসেন বলেন, এই আড়তে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই টন ইলিশ বিক্রি হয়। অর্থাৎ ৩৭-৫০ মণ। গড়ে ১ হাজার টাকা কেজি মূল্য হলে ৫০ মণের আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ২০ লাখ টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে খুচরা ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। এখানে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসলে হাঁকডাক দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। ইলিশ জমিয়ে রাখার কোনো সুযোগ থাকে না। যে কারণে আমাদের ইলিশ বরফ দিয়ে রাখতে হয় না। তাজা ইলিশ ক্রয় করার জন্য জেলা সদর, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে অনেক ক্রেতা আসে প্রতিদিন। তিনি আরো বলেন, আমাদের আড়তে আজকে ১ কেজি ১০০-২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকা। আর ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ প্রতিকেজি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয় ৫৫০-৭০০ টাকা।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তারা এখন কম-বেশি পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ পাচ্ছে। যাদের ইলিশ ধরার জালের ফাঁদ বড় তারা বড় সাইজের ইলিশ পায়। আর যারা কারেন্টজাল অথবা অন্য জাল দিয়ে মাছ ধরে তারা ছোট ইলিশ পায়। তবে অনেক জেলে ইলিশ পেলেও বলতে চায় না পেয়েছি। চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাগরের ইলিশ আসলেও স্থানীয় আড়তগুলোর ইলিশ সব পদ্মা-মেঘনার। এসব ইলিশের স্বাদ বেশি হওয়ায় চাহিদাও বেশি, ক্রেতাও বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত