ঢাবির হল থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় ৭১ হলের যমুনা ভবন থেকে পড়ে কাজী ফিরোজ নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে কীভাবে তিনি ভবন থেকে পড়ে গেলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন। এর পাশাপাশি হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন ফিরোজ। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তার মৃত্যুর বিষয়টি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া আলোকিত বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিজয় একাত্তর হলের ছাত্র ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আনুমানিক ১২টা ৫০ থেকে ৫৫ মিনিট বিজয় একাত্তর হল মাঠে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলাম। এ সময় আমি ‘আল্লাহ রে’ বলে একটা চিৎকার শুনতে পাই। এরপর সেই ব্লকের লিফটের দিকে তাকালে দেখি, উড়ন্ত লুঙ্গির মতো কিছু একটা নিচে পড়ে যাচ্ছে। এরপর বিকট একটা শব্দ হয়। বুঝলাম কেউ হয়তো লাফ দিয়েছে বা পড়ে গেছে।’
তিনি বলে, ‘তৎক্ষণাত আমি সেখানে দৌঁড়ে যাই। পাশের রিডিং রুম থেকে আরো কয়েকজন ভাই দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসেন। ওনার পরনে একটি লুঙ্গি এবং গলায় একটি গামছা ছিল। ওনার শরীর ছিল ঘর্মাক্ত। সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছেন। এরপর এক ভাই ওনার মুখে পানি দিয়ে বুকে পাঞ্চ করলে উনি নিশ্বাস নেওয়া শুরু করেন। পরে ওনাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’ ফিরোজের হলের (জিয়া হল) ২০৩ নম্বর কক্ষে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টেবিলে একটি খাতা অর্ধখোলা অবস্থায় রাখা। তার ওপর দুইটি সিগারেটের প্যাকেট। ওই প্যাকেট দুটি সরিয়ে দেখা যায় সেখানে পৃষ্ঠাভর্তি লেখা। পৃষ্ঠার ওপরের তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ১/০৯/২৩। আর এর নিচে লেখা আছে, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’ এ লেখার নিচে মাঝ বরাবর লিখা- ‘ফিরোজ’। এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত : ১১টা ৩।’ পৃষ্ঠার বাকি অর্ধেকে আরো লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। ‘আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।’ এই লেখার নিচে আবারও লেখা, ‘ফিরোজ’। এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’ কাজী ফিরোজের বন্ধুরা জানিয়েছেন, এ লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখার মতোই তাদের মনে হচ্ছে, তবে ফিরোজের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে আসা তার বড় ভাই জানিয়েছেন, তার এবং ফিরোজের লেখা প্রায় একই। খাতায় থাকা এই লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখা নয়।