কম খরচে অধিক লাভবান সবজি হিসেবে রাজবাড়ীতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে করলা চাষাবাদ। করলা চাষ করে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ পরামর্শ। রাজবাড়ী জেলা সদরের সুলতানপুর ইউনিয়নের সবজি চাষি সুজাত মোল্লা (৪০)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। অনান্য ফসলের পাশাপাশি চলতি মৌসুমে তিনি নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে করেছেন করলার চাষ। গত কয়েক মাসেই তিনি ৯০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। আগামী কয়েক মাসে আরো ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। তার মতো এমন আরো অনেক চাষি জেলায় এ বছর করলার চাষ করেছেন। করলা চাষি সুজাত মোল্লা বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ধান, গম, শাক সবজির চাষাবাদ করি। কৃষিকাজ করেই আমার জীবন-জীবিকা চলে। এ বছর গত মে মাসে আমি নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে উন্নতজাতের করলা চাষ করি। ৩০ দিন পরে ফলন আসে। প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। বর্তমানে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। প্রতি সপ্তাহে ২ দিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ কেজি করলা বিক্রি করছি। এই পর্যন্ত ৯০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছি। এই মৌসুমে আরও ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করব বলে আশা করছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১৪৯ হেক্টর জমিতে করলার চাষ করেছেন চাষিরা। যাতে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলা সদরে ৪৫ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৪০ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ৩০ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ১৫ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৯ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। চাষি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, চলতি বছরের মে মাসে করলার চাষ শুরু করি আমার নিজের ১৫ শতাংশ জমিতে। রোপণের ৩০ দিন পরেই ফলন আসে। আমি এই পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার বেশি করলা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছি। কম খরচে করলা চাষে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। সুলতানপুর ইউনিয়নের আরেক চাষি নায়েব আলি বলেন, আমি আমার ১৫ শতাংশ জমিতে চলতি মৌসুমে করলার চাষ করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দামও পেয়েছি। আমার পরিবারের মুখে এখন খুশির হাসি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনজুর মোর্শেদ বলেন, আমার সুলতানপুর ইউনিয়নে প্রায় ৫০ জন কৃষক করলা চাষে সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হয়েছেন চাষিরা। ফলনের শুরুর দিকে স্থানীয় বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে করলা। এখন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন করলা চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। একটি হিসেব করে দেখা গেছে হেক্টর প্রতি কলার উৎপাদন প্রায় ১০ টন। যা শতাংশ প্রতি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি। রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জনি খান বলেন, করলা একটি অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। করলা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। করলা হজম প্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। আমরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে করলা চাষিদের নিয়মিত সুপরামর্শ দিয়ে আসছি। ক্ষতিকর পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার শিখিয়েছি। অনান্য সবজির পাশাপাশি করলা চাষে ভালো দাম পেয়ে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন করলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। করলা চাষে লাভবান হয়ে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় চাষিদের সঙ্গে আছি। তাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।