ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রশাসনের অসহযোগিতা

জবিতে খুঁড়িয়ে চলছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন!

জবিতে খুঁড়িয়ে চলছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন!

পুরান ঢাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দূত্যি ছড়িয়েছে সমানতালে। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্বও করলেও এখন তার সেই জৌলুস নেই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাজেট কমে যাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, শিক্ষার্থীদের উদাসীনতাসহ নানা কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি নিবন্ধিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ডিবেটিং সোসাইটি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী (জবি শাখা), মাইম সোসাইটি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, রঙ্গভূমি, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, ফিল্ম ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব সংগঠন রয়েছে। এ সংগঠনগুলোর যাত্রাও বেশ আগের। নিবন্ধিত এ সংগঠনের তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে সাহিত্য সংসদ ও ব্যান্ড মিউজিক সোসাইটি। এ ছাড়া অনিবন্ধিত সংগঠন রয়েছে তরুণ কলাম লেখক ফোরামসহ আরো কয়েকটি।

সংগঠকরা জানান- প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, বাজেট সংকীর্ণতা, উন্মুক্ত পরিবেশ, যোগ্য নেতৃত্বহীনতার কারণে সংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। কিছু কিছু সংগঠনের কার্যক্রম প্রায় ম্লান হয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তুলনামূলকভাবে ক্রমেই বাজেট কমেছে। নিবন্ধিত সংগঠনগুলোর পৃথকবাজেটের পরিবর্তে সামষ্টিক বাজেট করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সব সংগঠনগুলোর বাজেট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসব ও অনুষ্ঠান খাতে। গেল কয়েক বছরে সাংস্কৃতিক খাতের বাজেট কমেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন খাতে বাজেট ছিল ২৬ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট কমিয়ে করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট আরো কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে। জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে পৃথক বাজেটের পরিবর্তন ঘটে।

এদিকে বাজেটের উৎসব ও অনুষ্ঠান খাতেও নেই দৃশ্যমান পরিবর্তন। অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামষ্টিক উৎসব ও অনুষ্ঠান বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩৫ লাখ ৩০ হাজার, এর আগে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ছিল মাত্র ২০ লাখ ৩৯ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে হয় মাত্র ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার। এবছরে ইউজিসির কাছে ৬২ লাখ প্রস্তাব করলে তা গ্রহণ হয়নি বলে জানান অর্থ ও হিসাব দপ্তর পরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট পাই না। ফলে সব দিকেই কম কম থাকে তুলনামূলকভাবে। আর করোনার পরে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী সংগঠনগুলোর পৃথক বাজেট বন্ধ করে উৎসব খাত থেকে দেওয়া হয় এবং কোনো সংগঠন কোনো অনুষ্ঠানে কত অর্থ নিল তার পৃথক হিসাব থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি তানভীর আহমেদ বলেন, সুষ্ঠু ধারার চলচ্চিত্রের দর্শক তৈরি এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র আন্দোলনকে বেগবান করা হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ক্লাবের লক্ষ্য। সংগঠন পরিচালনার জন্যে নানাবিধ সমস্যা আছে। যেমন- সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো অফিস কক্ষ নেই। এছাড়া চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য আমাদের প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেম নেই। যেগুলো ভাড়া করে এনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করতে হয়। এগুলো একটা সংগঠনের মৌলিক ও প্রধান সমস্যা।

গেল বছরের শেষের দিকে জবিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য সংসদ। সংগঠন পরিচালনায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যেতে হচ্ছে এটির। আক্ষেপ প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি আলিমুল ইসলাম বলেন, সাহিত্য সংসদে আমরা শিল্প-সাহিত্য চর্চা করি। আমাদের নিজস্ব কোনো কক্ষ নেই। কবে পাবো জানি না। কোনো প্রোগ্রাম করতে গেলেও প্রয়োজনীয় সুবিধা পায় না। সব মিলিয়ে আমরা সমস্যার মধ্যে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সহযোগিতা বাড়িয়ে দেয়া। তবে এ সব প্রতিবন্ধকতার মাঝেও ডিবেটিং সোসাইটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। এ বিষয়ে জবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, এবছর এটিএন বাংলার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের কার্যক্রম চালানোর যথাযথ চেষ্টা করছি। তবে করোনার পর এত কম বাজেটে কার্যক্রম চালানো কঠিন। বাজেটের আকার ৩-৪ গুণ বাড়ানো উচিত।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ইউজিসি থেকেই বাজেট স্বল্প পরিসরে দেয়া হয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি ভালো করার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত