ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

রাজবাড়ীতে লাউ চাষে লাভবান কৃষক

রাজবাড়ীতে লাউ চাষে লাভবান কৃষক

রাজবাড়ীতে কম খরচে অধিক লাভবান ফসল হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে লাউ চাষ। লাউ চাষ করে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের নিরাপদ বিষমুক্ত শাকসবজি চাষে দেওয়া হচ্ছে নানা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪৬০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করেছেন চাষিরা, যাতে মোট উৎপাদন ১২ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলা সদরে ১৪০ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৩০ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ৫০ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে উন্নতজাতের লাউ আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ী জেলা সদরের শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আইয়ুব ভূঁইয়া (৩০)। তিনি ১ যুগ ধরে পারিবারিকভাবে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি চলতি মৌসুমে এবার নিজের ২০ শতাংশ জমিতে করেছেন উন্নত জাতের ডায়না লাউয়ের চাষ। এরই মধ্যে তিনি ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আগামী কয়েক মাসে আরো ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। তার মতো এমন আরো দেড় হাজার চাষি জেলায় এ বছর করেছেন লাউ চাষ। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। কৃষি কাজ করেই আমরা আয় রোজগার করি। আমার বাবাকে দেখেই আমি কৃষি পেশাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করি। আমার পৈত্রিক ২০ শতাংশ জমিতে চলতি মৌসুমে ডায়না জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষ করেছি। সম্পূর্ণ জৈব্য সারের ব্যবহারে বিষমুক্ত নিরাপদ লাউ চাষ করছি। রোপণের দেড় মাস পর থেকেই লাউ বিক্রি শুরু করেছি। স্থানীয় বাজারে আকার ও মানভেদে প্রতিটি লাউ ১৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আশা করছি আল্লাহর রহমতে ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করব। লাউ চাষে আমি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। কৃষক রাজ্জাক বলেন, আমি এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে লাল তীর জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। লাউ চাষে গোবর, ছাই, কচুরিপনা আর পানিই প্রধান। এর বাইরে রাসায়রিক সারের খুব একটা ভূমিকা নেই। তাই ১ বিঘা জমিতে লাউ চাষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। সে তুলনায় ফলন ভালো হলে অনেক টাকা মুনাফা হয়। আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দামও পেয়েছি। শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের লাউ চাষি ফকরুদ্দিন বলেন, আমি নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে এ বছর শ্রাবন্তি জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ আবাদ করেছি। জমি তৈরি, বীজ বপন, আগাছা নিধন, সেচ, জৈব্য সারসহ সব কিছু মিলিয়ে ২০ শতাংশ জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার প্রায় ৫০০ লাউ বাজারে বিক্রি করছি। আরেক চাষি লালন বলেন, আমি এ বছর নিজের ৭৩ শতাংশ জমিতে ডায়না, শাবন্তী ও লাল তীর জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাউ চাষে শ্রম তুলনামূলক কম দিতে হয়। শীতকালীন সবজি হিসেবে ভোক্তাদের কাছে লাউয়ের চাহিদা বেশি এবং বাজার দর ভালো থাকায় প্রতি বিঘা জমির লাউ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব। এছাড়া লাউয়ের ডগা শাক হিসেবে বিক্রি করে আসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আসলে লাউ চাষ করে চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জনি খান জানান, শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নে প্রায় ২ শতাধিক চাষি লাউ চাষ করে আর্থিক সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হয়েছেন চাষিরা। ফলনের শুরুর দিকে স্থানীয় বাজারে ৩০ থেকে ৬০ টাকা দরে প্রতিটি লাউ বিক্রি হয়েছে। এখন ১৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন লাউ চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। একটি হিসেব করে দেখা গেছে হেক্টর প্রতি লাউয়ের ফলন ৩৫ থেকে ৪০ টন, যা শতাংশ প্রতি প্রায় ১৩৬ কেজি। কৃষিবিদ জনি খান আরো জানান, লাউ গাছের আগা, ডগা, ফল সবই অত্যন্ত পুষ্টিকর ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। লাউয়ের পানীয় অংশ প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন, খাদ্যশক্তি, জিংকসহ অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়া লাউ ওজন কমাতে, রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে ও হজমে সাহায্য করে। শরীর ঠান্ডা রাখে। ত্বকের জন্য উপকারী। আমরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে লাউ চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছি। ক্ষতিকর পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ আঠালো ফাঁদের ব্যবহার শিখিয়েছি। অনান্য সবজির পাশাপাশি লাউ চাষে ভালো দাম পেয়ে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন লাউ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। লাউ চাষে লাভবান হয়ে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় চাষিদের সঙ্গে আছি। তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত