পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষার তাগিদে নানা বস্তু পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা চলছে সারা বিশ্বে। এমনকি বাতিল প্লেনও রিসাইক্লিং শুরু হয়েছে। এর শুধু যন্ত্রাংশই নয়, গোটা কেবিনে রদবদল এনে নানাভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের দুই ব্যক্তি। খবর ডয়েচে ভেলের।
আয়ারল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে প্রবলু ঝোড়ো হাওয়া বিরল ঘটনা নয়। মুহূর্তের মধ্যেই রোদ অদৃশ্য হয়ে শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। সেখানে ঢেউ দেখতে হলে গরম জামাকাপড় সঙ্গে রাখতে হবে। তবে তার সঙ্গে বাতিল একটি প্লেনের পেটের মধ্যে আশ্রয় নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। স্যান্ডহাউস হোটেলের ব্যবস্থাপক পল ডাইভার বলেন, অতিথিরা খুব পছন্দ করেন। এর ওপর আরাম করে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তারা মানুষের সার্ফিং, সাঁতার কাটা দেখতে পারেন। পল বলেন, সমুদ্রের কাছে সবকিছুতেই মরিচা পড়ে যায়। দরজা, জানালা, শোয়ার ঘর- কিছুই রেহাই পায় না। তবে এখন পর্যন্ত এগুলো (প্লেনের অংশ) ভালোই কাজে লাগছে। রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই, মরিচাও ধরছে না। বিনিয়োগটা ভালোই হয়েছে। কেভিন বলেন, আমরা শেষ ফ্লাইটে সেগুলো কিনে নিই। ফিউসিলেজ (প্লেনের বডির প্রধান অংশ) বাদে বাকি সবকিছু রিসাইকেল করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে নতুন করে ব্যবহারের যোগ্য করা হয়। তার মধ্যে কয়েকটি আবার প্লেনে কাজে লাগানো হয়। আমরা প্লেনের প্রায় ৮০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করছি। তিনি জানান, প্লেনের দেওয়াল ও মেঝের ইনসুলেশন আরো মজবুত করতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী বাথরুম ও রান্নাঘর যোগ করা হয়। এভাবে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ছোট একটি বাড়ি তৈরি হয়ে যায়। কেভিন রেগান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বাড়িঘরের চল থাকলেও সেখানে ছোট বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ বুঝতে পারছে, আগের মতো আর বিশাল ভবন তৈরি করা যাবে না। এমন বাড়িঘর গরম রাখাও সম্ভব নয়। এ ধরনের তথাকথিত প্লেনের কবরখানা ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বেই। যেমন স্পেনের তেরুয়েল এ কারণেই বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক আকাশ পরিবহণ সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে বছরে প্রায় ৭০০টি বাতিল প্লেন পাঠানো হয়। এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে যত বেশি সম্ভব যন্ত্রাংশ পুনর্ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তথাকথিত এয়ারোপডস নামে এই ধারণার পেছনে রয়েছেন শেন টর্নটন ও কেভিন রেগান। বছর দুয়েক আগে তাদের মাথায় এই আইডিয়া এসেছিল। এরই মধ্যে তারা ৩০টির বেশি প্লেনের অংশ বাগানের ঘর, মোবাইল অফিস ও ছুটি কাটানোর জায়গায় রূপান্তরিত করেছেন। আকার-আয়তন ও সরঞ্জাম অনুযায়ী কোনো কোনো এয়ারোপডের দাম হতে পারে ২০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ইউরো। স্যান্ডহাউস হোটেলের ব্যবস্থাপক পল ডাইভার বলেন, এখানে বিশাল কাঠামো গড়ার অনুমতি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এগুলোই আদর্শ সমাধান। শীতকালে বা সবচেয়ে বড় ঝড়ের সময়ও এর মধ্যে কিছু টের পাওয়া যায় না। পড যত ছোট হবে, সেটি তত সহজে পরিবহন করা যাবে ও বিভিন্ন জায়গায় কাজে লাগানোর সুযোগ থাকবে। যেমন- বাণিজ্য মেলায় পণ্য প্রদর্শনের জন্য এমন সমাধান সূত্র অনেক কোম্পানির জন্য আকর্ষণীয়।