বিশ্ব পর্যটন দিবসে বর্ণিল সাজে কক্সবাজার সৈকত

ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে নানা আয়োজন

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত পর্যটন মেলাকে উপজীব্য করে হোটেল ভাড়ায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ, রেস্তোরাঁয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, স্থলপথে গাড়ি ও আকাশ পথে বিমান ভাড়াসহ মেলায় যুক্ত পর্যটন অনুষঙ্গ ৪৯ আইটেমে ১৬টি পণ্যে বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে। পর্যটনের স্বার্থে বিশাল এ আয়োজন সুন্দরভাবে সমাপ্ত করতে সবার প্রতি আহ্বান প্রশাসনের।

কক্সবাজারের প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির আয়োজনে কক্সবাজারে আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্ণিভাল শুরু হবে। এমনটি মনে করছেন মেলা ও কার্নিভাল আয়োজক সংশ্লিষ্টরা।

আবার, মেলা উপলক্ষ্যে সাত দিন ছাড় ঘোষণা করা হলেও তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস নিয়েছে ব্যতিক্রমি উদ্যোগ। মেলার স্টল হতে সংগ্রহ করা ভাউচারে পুরো অক্টোবর মাসেই মেলায় দেয়া ছাড়ের সুযোগ ভোগ করতে পারবেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিন্ট্রেট সৈয়দাজাদী মাহবুবা মনজুর মুনা জানান, গত মৌসুমের চেয়ে জমকালো আয়োজনে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে এবারো কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল হচ্ছে। ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে থেকে নানা আয়োজনে শুরু হবে আজ ২৭ সেপ্টেম্বরের সকাল।

তিনি বলেন, সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয় ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তথ্য অফিসের সামনে গড়া হচ্ছে আকর্ষণীয় মঞ্চ। সড়কের দুই পাশে বসানো হয়েছে দুই শতাধিক স্টল। মেলা উপলক্ষ্যে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, সৈকতে ঘোড়ার বহর, বিচ বাইকসহ ঐতিহ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে বিভিন্ন স্লোগানে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বের করা হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। এবারে নতুন যোগ হচ্ছে বিচ ম্যারাথন। আজ থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত নানা আয়োজনের উৎসব থাকছে।

মেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, কক্সবাজারকে উৎসবে মাতোয়ারা রাখতে মেলা উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে হোটেল থেকে মোটেল রিসোর্টে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ এবং রেস্তোঁরায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ও কক্সবাজারগামী বিমান ও দূরপাল্লার বাস কর্তৃপক্ষও মূল্যছাড়সহ বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে।

এডিএম জানান, একদিকে বিশাল সাগর, আরেকদিকে সবুজ পাহাড়, মাঝখানে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পিচঢালা মেরিনড্রাইভে কক্সবাজার নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্যের শহর। আকাশ থেকে এ তিনের সম্মিলন অপরূপ, যা নিজে না দেখলে মিস করা হবে। পাহাড় থেকে সমুদ্র ও প্রকৃতির মিতালির সৌন্দর্য স্বল্প খরচে অবলোকনে পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য চালু হচ্ছে ‘বার্ডস আই ভিউ’ নামে হেলিকপ্টার রাইড সার্ভিস। চাহিদার ভিত্তিতে সারা বছরই সচল রাখার উদ্যোগ চলছে।

ইউনিভার্সেল ট্যুরিজম অ্যান্ড হেলিকপ্টার সার্ভিস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) এম. রেজাউল করিম রেজা বলেন, প্রকৃতিপ্রেমীদের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা দিতে হেলিকপ্টারে আকাশ ভ্রমণ সেবা চালু করা। ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আকাশপথে আসা থেকে যাওয়া এবং উপভোগ্য স্থিতির সময় একবারের জন্য ১০ মিনিটে জনপ্রতি ৫ হাজার ৫০০ টাকা বিনিময় ধার্য করা হয়েছে। পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষ্যে ১০ শতাংশ ছাড়ে ০১৬১৮০৯৯০৮৯ নম্বরে যোগাযোগ করে যে কেউ চাইলে সেবা নিতে পারেন।

এডিএম আরো জানান, কক্সবাজারের পরিচিতি বিশ্বময় করতে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষ্যে উন্মোচন হয়েছে ‘থিম সং’। অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা। প্রতিদিনই চলছে সৈকত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। মেলায় রয়েছে সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে, আতশবাজি, রোড থেকে শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক থেকে শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী এবং কনসার্ট।

তিনি আরো জানান, বিনোদনে লোকাল শিল্পীর পাশাপাশি আসছেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেট আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। সুনামগঞ্জের শিল্পীরা হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান গাইবেন। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পী, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর টিম। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেমসুন্দর ছাড়াও একেক দিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, আভাসের তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরো অনেক জাতীয় শিল্পী। সাত দিন গানে আড্ডায় স্পোর্টসসহ বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকসহ এলাকার সব বাসিন্দাদের মাতিয়ে রাখবে পর্যটন মেলা।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন মেলা উপলক্ষ্যে আমরাও বিশেষ আয়োজন হাতে নিয়েছি। ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর তিন দিনের ইলিশ উৎসবে ৯৯৯ টাকা থেকে ভিন্ন মূল্যে বৈচিত্র্যময় স্বাদে আটটি প্যাকেজে ইলিশের রসনা ভোগ করতে পারবেন পর্যটক ও দর্শণার্থীরা। অন্যদের মতো মেলার ছাড় শুধু সাত দিন নয়, আমরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ছাড়ের সুযোগ রাখছি। তবে, মেলায় গিয়ে আমাদের স্টল হতে রুম ও রেস্তোরাঁর ছাড়ের ভাউচার সংগ্রহ করতে হবে। হোটেল ভাড়ায় ৬০ শতাংশ এবং খাবারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড় পাবেন ভাউচারধারীরা।

কক্সবাজার হোটেল থেকে গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে ভিন্ন মাত্রার আনন্দ দিতে আমরা প্রস্তুত। ছাড়ের বিষয়ে সব হোটেল থেকে মোটেলে প্রশাসনিক তদারকি দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হোটেল থেকে মোটেল অফিসার্স অ্যাসোয়িশেন নেতা মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ ইচ্ছে থাকলেও অতি ব্যয়ের ভয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসে না। অনুষ্ঠিতব্য পর্যটন মেলা এমন সব মানুষের ‘স্বাদ ও স্বাধ্য’র সমন্বয় ঘটাতে পারে। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ছাড়ে নরমাল হোটেলের ভাড়ায় স্টার হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সারা বছরে সেটাপের চেয়ে মেলা উপলক্ষ্যে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধা থেকে অসুবিধায় যেকোনো প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের কন্ট্রোল রুমের (০১৩২০১৬০০০০) নম্বরে যোগাযোগের আহ্বান জানান তিনি। কক্সবাজার পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল নিজেদেরই অনুষ্ঠান থেকে সেভাবে মাথায় নিয়েই পরিচ্ছন্নতাসহ সব কার্যক্রম চলছে।

কক্সবাজারের সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কার্নিভালসহ পুরো পর্যটন শহরের সার্বিক নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ তৎপর রয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও মাঠে রয়েছে বিশেষ টিম।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, লোকারণ্য কক্সবাজার পর্যটন মেলাস্থল সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ছাড় বাস্তবায়ন ও বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারের মর্যাদা বাড়াতে তদারকি থাকবে। মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।