কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় নদীর চরে অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বেলা ১১টায় গড়াই নদীর বাম তীরের হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের শালদাহ মৌজায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীলের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর অভিযোগ স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তচক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব গরিব মানুষদের এখানে বসতে দিয়েছে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা (ভূমি) কমিশনার দবির উদ্দিন বলেন, গৃহহীন বা আশ্রয়হীন মানুষের ঘর করে দিচ্ছে সরকার। তারা চাইলে সরকারের কাছে ঘরের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া কেউ যদি টাকার বিনিময়ে এসব সরকারি জমিতে কাউকে বসিয়ে থাকে সে বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উচ্ছেদ হওয়া গৃহহীন জেসমিন বলেন, আমি বাঁধের চরে ভাড়া ছিলাম, হঠাৎ দেখি এই চরে টাকার বিনিময়ে জমি দেয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি করার জন্য। আমিও স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নেদাই মেম্বারকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ৩ কাঠা জমি নিয়ে কিস্তির লোন তুলে এই ঘরটা তুলেছিলাম। এখন আমার সব গেল। আমি এর বিচার চাই, আমার টাকা ফেরত চাই। তবে অভিযুক্ত নেদাই মেম্বর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিই নাই, টাকা নিয়েছে ছেলে পেলে। এছাড়াও শালদাহ গ্রামের সুমন এবং বোয়ালদাহ গ্রামের জাকিরও এই টাকা পয়সা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। উচ্ছেদ হওয়া মানিকের স্ত্রী মেঘলা খাতুনের অভিযোগ, হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জামাই আমলাপাড়ার বাসিন্দা জনি আমার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে আড়াই কাঠা জমি দিয়েছে। আমার টাকা ফেরত চাই সমিতি থেকে লোন করা টাকায় ঘর তুলেছিলাম তার ক্ষতিপূরণ চাই। অভিযোগ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের জামাই জনি বলেন, এ বিষয়ে আমি ফোনে কোনো কথা বলতে রাজি নই, আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে চাই। কখন কথা বলবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সুবিধামতো সময়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব’ এই কথা বলেই ফোন কল কেটে দেন তিনি। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মুশতাক হোসেন মাসুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একদল দুর্বৃত্তচক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরকারি এসব জমি বিক্রি করেছে। যেসব লোকজন এর সঙ্গে জড়িত আছে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তার প্রতিকার চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার দরখাস্ত করেছি প্রশাসনের কাছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান উদ্যোগ।