বিবাহিত ও গর্ভবতী

জবিতে হল ছাড়ার নির্দেশ বাতিলে আইনি নোটিশ

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে অবস্থানরত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের দ্রুত হল ছেড়ে নির্দেশটি ‘বৈষম্যমূলক বিধান’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সোলায়মান তুষার এই নোটিশ ডাক ও ই-মেইলযোগে পাঠিয়েছেন। লিগাল নোটিশে আইনজীবী বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, বিবাহিত ও গর্ভবর্তী হওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না বলে নোটিশ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলী এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা-২০২১ এর ১৭ নং ধারা মোতাবেক বিবাহিত ও গর্ভবর্তী ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না। বিধায় তারা অতিদ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায়, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এই মর্মে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হলে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত ও গর্ভবর্তী ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ছাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। নোটিশে সোলায়মান তুষার বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং ২৮ (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা অন্যস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বভরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। বিবাহিত ও গর্ভবর্তী ছাত্রীদের জন্য এমন নিয়ম নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথে অন্তরায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তিনি নোটিশ প্রাপ্তির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব। এ বিষয়ে আইনজীবী সোলায়মান তুষার বলেন, আমি কারোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে না, সংবাদমাধ্যমে খবরটি দেখার পর আমি নিজে থেকে এই নোটিশ পাঠিয়ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালাও যদি এই রকম কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেই বিধিমালার সঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮ (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংঘর্ষিক। আর সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বা বিধিমালা বাতিল হয়ে যায়। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, আমি এখনও হাতে নোটিশ পাইনি। আর হল থেকে যে নোটিশ দেয়া হয়ছে তা বিধিমালায় রয়েছে, এর বাইরে তো কিছু করিনি। আমি বিবাহিত কিংবা গর্ভবতী যারা তাদের তো সময় দিয়েছিলাম; কিন্তু আইনি নোটিশ কেনো দেয়া হবে বুঝলাম না। যারা বিবাহিত আছে তাদের আবারও নোটিশ দিয়ে হল থেকে নামিয়ে দেয়া হবে। আর বিষয়টি আমাদের মধ্য থেকেই কেউ করেছে। আমি খুঁজে বের করব। উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর একটি নোটিশের মাধ্যমে ‘বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল’ এ অবস্থানরত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের অতিদ্রুত হল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হল প্রশাসন। একই সঙ্গে মাস্টার্সের ফল প্রকাশ হওয়া আবাসিক ছাত্রীদেরও হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা ও চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।