গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষ হলেও শূন্য রয়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০ আসন। শূন্য এসব আসনে অবশেষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন বন্ধ রেখে এ ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ অক্টোবর ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গঠিত সমন্বিত ভর্তি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- গুচ্ছ ভর্তির কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের জানানো হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, এবার আর স্পট অ্যাডমিশন নেওয়া হবে না। শুধু মেধাতালিকার মাধ্যমে অপেক্ষামাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। ৩ থেকে ৪ অক্টোবরের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, বৈঠকে আরো একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা হলো- শিক্ষার্থী কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিষয়ে ভর্তি থাকলে মাইগ্রেশনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন করতে পারবেন না। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন বন্ধ রাখার যৌক্তিক অনেকগুলো কারণ রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় মাস ক্লাস হয়ে গেছে। যেখানে সেমিস্টার তিন বা ছয় মাসে, সেখানে এখন নতুন ছাত্রছাত্রী এলে কীভাবে, সে প্রথম সেমিস্টার কভার করবে? ইনকোর্স-টিউটোরিয়ালে তাদের নম্বরও দেওয়া হয়ে গেছে। আবার পরিচিতি-পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ও রয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
গত ২১ আগস্ট গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও ফি জমার শেষদিন ছিল। ২২ আগস্ট মূল কাগজপত্র জমা নেওয়া হয়। এরপর আর ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ তালিকা বা কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষের ক্লাসও শুরু হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড়মাসের বেশি সময় ধরে ক্লাস চলছে।
গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৪১টি আসনশূন্য রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপরই রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনশূন্য ২১৫টি। এছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯০, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৩, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৭, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৩, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩৩, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩৪, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৯টি আসনশূন্য রয়েছে।
অন্যদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭টি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৭টি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫টি আসন ফাঁকা পড়ে আছে।
চলতি বছরের ২০ জুন গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ করা হয়। কর্তৃপক্ষ প্রথমে তিন ধাপে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তিন ধাপের পরও আসনশূন্য থাকায় চতুর্থ ধাপে ২০-২২ আগস্ট ভর্তি নেওয়া হয়। অন্যদিকে প্রথমে ১০ আগস্ট থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে তা পিছিয়ে ১৬ আগস্ট নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। সেই হিসাবে দেড় মাস ধরে ক্লাস চলছে।